নিজস্ব প্রতিনিধি: ১টা কারখানাই যে এলাকার ছবিটা অনেকটাই বদলে দিতে পারে সেটা এখন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন পুরুলিয়া(Purulia) জেলাবাসী। আর তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে পদ্মফুল শিবিরের নেতা থেকে কর্মীরা। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়া জেলার বুকে কার্যত গেরুয়া সুনামি বয়ে গিয়েছিল। জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে গেলেও হাতছাড়া হয়েছিল একাধিক ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি। আর গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে জেলার সিংহভাগ গিয়েছিল বিজেপির দখলে। তার মধ্যে সব থেকে বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল জেলার রঘুনাথপুর(Raghunathpur) মহকুমায়। অথচ এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই রঘুনাথপুর মহকুমায় চূড়ান্ত ভাবে ধরাশায়ী বিজেপি(BJP)। গ্রামের পর গ্রাম চলে গিয়েছে তৃণমূলের(TMC) দখলে। আর সেই জয়ের কারণ হিসাবে উঠে আসছে একটি সিমেন্ট কারখানার নির্মাণ যার উদ্বোধন গত সোমার ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) করেছেন কলকাতা থেকে।
মুখ্যমন্ত্রী যে সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধন করেছেন সেটি দেশে প্রখ্যাত বেসরকারি সিমেন্ট উৎপাদক সংস্থা শ্রী সিমেন্টের(Sree Cement)। ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তাঁরা পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরের ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী’(Jangalsundari Karmanagari) শিল্পনগরীতে ওই সিমেন্ট কারখানা গড়ে তুলেছেন। বাম আমলে রঘুনাথপুরে শিল্পতালুক গড়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শিল্প হয়নি। এলাকাবাসী ভেবেছিলেন, নতুন সরকার শিল্প করবে। ক্ষমতায় আসার পরে শিল্পায়নকে ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সূত্রেই রঘুনাথপুর মহকুমার রঘুনাথপুর-১, নিতুড়িয়া এবং রঘুনাথপুর-২ ব্লককে নিয়ে ২০১১ সালে তৈরি হয় ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী’। সেই কর্মনগরীর ২টি ভাগ। Industrial Park-1 ও Industrial Park-2। সেই দুই শিল্পপার্কে আগামী দিনে ৭২ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ হতে চলেছে আগামী দিনে। কেননা ওই কর্মনগরীতেই ৬০০ একর জমিতে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সুসংহত ইস্পাত কারখানা গড়তে শুরু করেছে একটি ইস্পাত সংস্থা। আরও কিছু শিল্প সংস্থা রঘুনাথপুরে বড় মাপের শিল্প গড়তে রাজ্যের কাছে জমি চেয়েছে।
কিন্তু রাজনীতির ময়দানে আসল বদলটা এনে দিয়েছে শ্রী সিমেন্টের কারখানাই। কেননা মাত্র ১৬ মাসের মধ্যে সেই কারখানা গড়ে উঠেছে কোনও বাধা ছাড়াই। একটি বড় মাপের সিমেন্ট কারখানা তৈরির পেছনে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকা অন্যতম কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন তা সেখানে স্থাপন করতে পারায় কারখানা গড়ে তুলতে কোনও সমস্যা হয়নি। কারখানা গড়তে শাসকদল ও প্রশাসনের তরফে বহুল সহযোগিতা করা হয়। কেননা তৃণমূলের পাখির চোখ ছিল বিজেপির হাত থেকে ওই মহকুমার জমি ছিনিয়ে নেওয়া। আর সেই কাজে তাঁদের অনুঘটক হয়ে উঠেছিল ওই সিমেন্ট কারখানার নির্মাণ। বছর কয়েক আগে ওই সিমেন্ট সংস্থা নিতুড়িয়া ব্লকের দীঘা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক থেকে দু’কিলোমিটার দূরে কারখানার জন্য জমি পরিদর্শন করেছিলেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জমি কেনে সংস্থাটি। ১৬ মাস আগে নির্মাণকাজ শুরু হয়।
কারখানার নির্মাণকাজে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় শ্রমিকদের যা বিজেপিকে প্রাথমিক ভাবে ধাক্কা দিয়েছিল। কাজ পাওয়ার তাগিদে এলাকার যুবকেরা ফের জোড়াফুল শিবিরে চলে আসে দলে দলে। একই সঙ্গে সেই নির্মাণকাজে শ্রমিকদের সুরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল। ওই পর্বে দুর্ঘটনায় কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হয়নি। কারখানা গড়ে ওঠার পরে তা উদ্বোধনের আগেই অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চায়েত ভোট। সেখানেই ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি। গ্রামের পর গ্রামে উড়ছে জোড়াফুল। শুধু তাই নয়, এখন ওই কারখানায় পূর্ণ দমে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু হয়ে গিয়েছে। আর সেই কাজেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় কর্মীদেরই। কারখানার ৪৫০ জন কর্মীর মধ্যে ৯২ শতাংশ স্থানীয় বা রাজ্যের বাসিন্দা। আর তার জেরেই এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছে বিজেপি। উল্টোদিকে লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়ার আসন ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল। একটা সিমেন্ট কারখানা বদলে দিয়েছে অনেক ছবি।