নিজস্ব প্রতিনিধি: কার্যত বিরল, নজীরবিহীনও। কেউ যদি দাবি করে উত্তরবঙ্গের বুকে এই প্রথম এমন ঘটনা দেখা গেল, তাহলেও বোধহয় খুব একটা ভুল বলা হবে না। দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে পরিবারের কোনও সদস্য মারা যাওয়ায় তাঁর দেহ নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটা দিয়েছেন পরিবারেরই কোনও সদস্য। কিন্তু হাতি(Elephant)! নাহ এখনও পর্যন্ত ভারতের বুকে কোথাও সেই দৃশ্যের দেখা মেলেনি। দেখা মিলল শুক্রবার উত্তরবঙ্গের বুকে। মৃত সন্তানকে শুঁড়ে তুলে একাধিক চা বাগান পেরিয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিল মা হাতি। আর এই ৭ কিমি পথ পাড়ি দেওয়ার পথে মাঝে মধ্যেই সে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু কখনই কাছছাড়া করেনি সন্তানের মৃতদেহকে। সারক্ষণই তা আগলে রাখলো মা হাতি। কার্যত এক অতি বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকলো ডুয়ার্স(Dooars)।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার জলপাইগুড়ি(Jalpaiguri) জেলার বানারহাট(Banarhat) এলাকার চুনাভাটি চা বাগানে একটি বাচ্চা হাতির মৃত্যু হয়। কিন্তু সন্তানের সেই মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি মা হাতি। আর তারপরেই মা হাতিটি প্রথমে চুনাভাটি চা বাগান থেকে আমবাড়ি চা বাগান এরপর ডায়না চা-বাগান সেখান থেকে নিউডুয়ার্স চা বাগান পেরিয়ে রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের একটি ঝোঁপের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে দেখা যায় মা হাতি ও তার মৃত সন্তানকে আগরে তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে এক পাল হাতি। মনে করা হচ্ছে ওই মা হাতিটি ওই দলেরই। ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সেখানে ছুটে আসেন বন দফতরের(Forest Department) বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়ার্ডের আধিকারিক ও কর্মীরা। এডিএফও জন্মেজয় পাল, বনদফতরের পশু চিকিৎসক ডাঃ শ্বেতা মন্ডল, অনরারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরীও ঘটনাস্থলে আসেন।
বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ডায়না বাগান থেকে ৩০-৩৫টি হাতির দল লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এদিকে শাবকটির মৃত্যুর পর মা হাতি শাবকটিকে শুঁড়ে তুলে বাগানে ঘোরাঘুরি করে। বনকর্মীরা হাতিগুলির ওপর নজর রাখতেও শুরু করে। তবে হাতিগুলি ঝোপের আড়ালে থাকায় নজরদারিতে ব্যাঘাত ঘটছে। কিন্তু তার মাঝেই সন্তানের মৃত্যুকে মেনে নিতে না পেরে মা হাতির আচরণ মানুষের চোখের কোনকেও জলে ভিজিয়ে দিয়েছে।