নিজস্ব প্রতিনিধি: নিজের পদমর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বেসরকারি বিএড এবং বিপিএড কলেজের স্বীকৃতি বাতিলের হুমকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন তিনি। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তথা ইনসপেক্টর অব কলেজেস অপূর্ব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে নড়চড়ে বসেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতরও। খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই বিষয়ে যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। অপূর্ববাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মালদা জেলারই ঝলঝলিয়ার বাসিন্দা মহম্মদ নজরুল শেখ। তিনি গত আগস্ট মাসে অপূর্ববাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় এবং রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী সচিবালয়ে। সেই সঙ্গে চিঠি দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি’র চেয়ারম্যানের কাছেও।
অপূর্ববাবুর বিরুদ্ধে নজরুল শেখের অভিযোগ, ইনসপেক্টর অব কলেজেস হিসেবে অপূর্ববাবু গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সব বিএড এবং বিপিএড কলেজের স্বীকৃতি নবীকরণের নামে অথবা স্বীকৃতি বাতিলের হুমকি দিয়ে কলেজপিছু ৫ লাখ টাকা করে ঘুষ নিচ্ছেন। পাশাপাশি নজরুল অভিযোগ তুলেছেন যে, বাম জমানায় যখন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনসপেক্টর অব কলেজেস পদে অপূর্ববাবুকে নিয়োগ করা হয় তখন একাধিক অনিয়ম হয়েছিল। সেই নিয়োগের ক্ষেত্রে সবথেকে চাঞ্চল্যকর ঘটনা এটাই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে পদাধিকারবলে অপূর্ববাবু নিজেই সংবাদপত্রে ওই পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেন। নিজেই প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। আর নিজেই সেই চাকরি নেন। অর্থাৎ নিয়োগকর্তা ও চাকরিপ্রার্থী একই ব্যক্তি! এমন নজির এরাজ্য তো বটেই, দেশেও কার্যত বিরল বলছেন শিক্ষাবিদদের একটি মহল। এখানেই অভিযোগের শেষ নয়। চিঠিতে জানানো হয়েছে, এই নিয়োগের জন্য অপূর্ববাবু ইউজিসি বা রাজ্য উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বেঁধে দেওয়া যোগ্যতামান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে লঙ্ঘন করেছেন। কারণ, এই পদের জন্য প্রফেসর হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। সেখানে বিজ্ঞাপনে চাওয়া হয়েছিল ১০ বছরের অভিজ্ঞতা। আর, অপূর্ববাবু যখন এই পদে যোগ দেন, তাঁর অভিজ্ঞতা মাত্র পাঁচ বছর সাত মাসের!
নজরুলের আরও অভিযোগ, ইনসপেক্টর অব কলেজেস পদের জন্য সমস্ত স্তরেই ভালো নম্বর থাকা আবশ্যক। সেখানে অপূর্ববাবু মাধ্যমিকে ৫৮ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৮ শতাংশ, স্নাতকস্তরে ৫০ শতাংশ এবং স্নাতকোত্তরে ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু ঘটনা এটাই যে নজরুলের সেই অভিযোগের পরেও এখনও স্বপদে বহাল অপূর্ব চক্রবর্তী। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কোনওরকম মাথাই ঘামাতে চাইছে না। সেটা ধরা পড়েছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তি ছেত্রীর মন্তব্যে। তিনি জানিয়েছেন, ‘এমন হাস্যকর অভিযোগ নিয়ে আমি কিছু বলব না।’ তবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিষয়টিকে এত লঘু করে দেখতে চাইছেন না। তিনি জানিয়েছেন, ‘অভিযোগের সামান্যতম সারবত্তাও যদি থাকে, তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’