নিজস্ব প্রতিনিধি: দোল(Doljatra) মানে শুধুই রঙ খেলা বা রঙ মাখানো নয়। তার সঙ্গে পরতে পরে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাসও। অনেক রীতিও। বাংলার বুকে সেই রকমই এক টুকরো ইতিহাস আর রীতি জড়িয়ে আছে উত্তরবঙ্গের(North Bengal) জলপাইগুড়ি(Jalpaiguri) জেলার বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির(Baikunthapur Rajbari) দোলযাত্রার সঙ্গে। সালটা ১৮৪৯। ঘোর ব্রিটিশ রাজেও বিলেত থেকে আসা সাহেবকে মুখের ওপর না বলে দিতে পেরেছিলেন বৈকুন্ঠপুরের রাজা। প্রচলিত গল্প হল, রাজার কাছে হাতি চেয়েছিলেন জোসেফ ডালটন হুকার, যিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন তাঁর লেখা ‘Himalaya Journal’ বইয়ের জন্য। কিন্তু ব্রিটিশ বিরোধী রাজা তাঁকে মুখের ওপর ‘না’ বলে দিতে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘হাতি দেওয়া যাবে না। আমার গোপাল দোলের দিন হাতি চড়ে দোল খেলতে যাবে’। সাহেবও দেখেছিলেন দোলের দিন হাতি চড়ে রাজবাড়ির কুলদেবতা বৈকুণ্ঠনাথ এবং গোপাল ঠাকুর বেড়িয়েছিলেন দোল খেলতে। সেই ঘটনা হুকার সাহেব তাঁর বইয়ে লিখেও গিয়েছেন।
আরও পড়ুন ‘পান্ডব গোয়েন্দা’ এবার স্বর্গ থেকে লেখা হবে, তারাদের দেশে স্রষ্টা
তবে সেই রাজ্যপাট এখন নেই, জাঁকজমকও নেই। নেই হাতিও। তবে রীতি মেনেই রাজবাড়ি থেকে গোপাল বিগ্রহ বের হয় দোলের দিন। আর উৎসবও শুধু রাজপরিবারে সীমাবন্ধ নেই, আশেপাশের বাসিন্দারাও এখন বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির উৎসবে সামিল। তাঁরাই দোলনায় বসিয়ে সওয়ারিতে নিয়ে যান ‘রাজার গোপাল’কে। বৈকুন্ঠপুরের রাজ ঐতিহ্য বয়ে চলেছে বাসিন্দাদের কাঁধে চেপে। দোল পূর্ণিমায় রাজপরিবারের কুলদেবতা বৈকুণ্ঠনাথ এবং গোপাল ঠাকুরের বিগ্রহকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দোলনায় বসানো হয়। পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ তিথিতে বা হোলির দিন দোলনায় সওয়ারি হন তাঁরা। দুই দেবতাকে দোলনায় বসিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘোরানো হয়। তারপর বিগ্রহকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজবাড়ির পুকুরে। তারপর ৭ দিন সেই বিগ্রহ থাকে নাটমন্দিরে। অষ্টম দিনে দুই বিগ্রহ ফিরে যায় আবার তাঁদের সিংহাসনে।