নিজস্ব প্রতিনিধি: দলের কর্মী খুনের ঘটনায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে এমন ঘটনা চট করে দেখা যায় না। কিন্তু সেটাই এবার করে দেখালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা(South 24 Pargana) জেলার ক্যানিং(Canning) থানার গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কচুয়া পিয়ারে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়ে গিয়েছেন সেখানকার গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল(TMC) সদস্য স্বপন মাঝি। তাঁর সঙ্গেই খুন(Murder) হয়েছেন এলাকারই তৃণমূলের দুই বুথ সভাপতি ঝন্টু হালদার ও ভূতনাথ প্রামাণিক। সেই ঘটনার জেরেই এদিন অভিষেক ফেসবুকে পোস্ট করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁদের। নিজের সেই পোস্টে অভিষেক লিখেছেন, ‘স্বপন মাঝি, ঝন্টু হালদার ও ভূতনাথ প্রামাণিকের দুর্ভাগ্যজনক প্রয়াণে আমি শোকস্তব্ধ। তৃণমূল কংগ্রেস ৩জন একনিষ্ঠ সৈনিককে হারালো। তাঁদের পরিবার-পরিজন, বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
ক্যানিংয়ের এই খুনের ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। তবে ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁরা জানতে পেরেছেন এই ঘটনার পিছনে রয়েছে রফিকূল নামে এক দুষ্কৃতী। স্বপন মাজির দাপটের কাছে কার্যত রফিকূল দাঁড়াতে পারছিলেন না। রফিকূলের কাজকর্ম এলাকার মানুষের মনে তীব্র অসন্তোষ তৈরি করেছিল। তার জেরে স্বপন রফিকূলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তার জেরে কার্যত এলাকা ছাড়া হতে হয়েছিল রফিকূলকে। সেই রাগেই সে এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তাঁরা এটাও জানতে পেরেছে খুনীদের মূল টার্গেট ছিল স্বপনবাবুই। কিন্তু তাঁকে খুন করার ঘটনার সাক্ষী হিসাবে থেকে গিয়েছিল ঝন্টু ও ভূতনাথ। সেই সাক্ষী মেটাতে এদিন ওই দুইজনকেও খুন করা হয়। খুন করে বাইকে পালিয়ে যাওয়ার সময় রফিকূলকে চিনতে পারেন কয়েকজন গ্রামবাসী। পুলিশ এখন সেই রফিকূলের সন্ধান শুরু করেছে।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এটাও জানতে পেরেছে, ঘটনার আগে ঘটনাস্থলে সবজি চাষীর ভেক ধরে এলাকায় গিয়েছিল ৪জন দুষ্কৃতী। বাইকে চেপে ঝন্টু আর ভূতনাথকে নিয়ে স্বপনবাবু এদিন রওয়ানা দিয়েছিলেন হেরোভাঙা বাজারে দলের কার্যালয়ের দিকে। কেননা এদিন সেখানে ২১শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা হওয়ার কথা ছিল। পথে ওই ৪জন দুষ্কৃতী স্বপনবাবুর রাস্তা আটকায়। বাইকে বসে থাকা অবস্থাতেই স্বপনবাবুকে ৩ রাউন্ড গুলি করে তারা। সেই সময় ঝন্টু ও ভূতনাথ পালানোর চেষ্টা করলে তাদের লক্ষ্য করে প্রথমে বোমা ছোঁড়ে দুষ্কৃতীরা। তাতে আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায় ২জন। সেই সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁদের গলা কেটে দেয় দুষ্কৃতীরা। তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁদের গুলিও করে তারা। এমনকি ঝন্টু ও ভূতনাথের মাথা কেটে নিয়ে চলে যেতেও চেষ্টা করেছিল তারা। কিন্তু গ্রামবাসীদের চিৎকার চেঁচামেচিতে দুষ্কৃতীরা কার্যত মাঠ ধরে হাঁটতে হাঁটতে গা ঢাকা দেয়। আর এইসব দেখেই পুলিশের ধারনা এই ঘটনা রীতিমত বহু পূর্ব পরিকল্পিত এবং এই ঘটনার সঙ্গে স্বপনবাবুর ঘনিষ্ঠ কেউ জড়িত আছে। কেননা স্বপনবাবু যে ওই সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাবেন সেকথা আগে থেকেই জানা ছিল দুষ্কৃতীদের। সেই কারণেই তারা রাস্তার ধরে অপেক্ষা করছিল এই নৃশংসতম ঘটনা ঘটাবার জন্য।
এদিকে এই খুনের ঘটনায় তৃণমূলের তরফে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দিকেই আঙুল তুলেছে। ঘটনার জেরে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা ও ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস একযোগে জানিয়েছেন, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই এলাকায় তৃণমূলের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। যদিও এই দাবি অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি সুনীপ দাস এই ঘটনায় জানিয়েছেন, ‘তৃণমূল বার বার বলে, বিজেপিকে দেখা যায় না। বিজেপি বলে কিছু নেই। অথচ খুনের সময় দোষ চাপিয়ে দেওয়ার বেলায় বিজেপি! আসল কথা হল পঞ্চায়েত ভোট আসছে। এলাকায় কে বড় দাদা হয়ে থাকবে তা নিয়েই তৃণমূলের মধ্যে গন্ডগোল। তৃণমূলের দুই পক্ষের ঝামেলার জেরে খুন। এর আগেও খুনের ঘটনা ঘটেছিল ওই এলাকায়। এর পর তদন্তও হবে। কোনও এক ব্যক্তিকে শাস্তিও দেওয়া হবে। কিন্তু আসল মাথারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াবে।’