নিজস্ব প্রতিনিধি: কিছুদিন আগেই কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে পোস্টার পড়েছিল ‘বিকল্প রাজনীতি’র। সেই ঘটনায় দেখা গিয়েছিল, পোস্টারের রঙ দেশের জাতীয় পতাকার মতোই। সেই ‘বিকল্প রাজনীতি’ নিয়ে আবার সেই দিনেই ট্যুইট করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী। তা দেখে অনেকেই মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেসের যে সব নেতা ২৪’র যুদ্ধে(General Election 2024) তৃণমূলের(TMC) সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না, তাঁরা একটি বিকল্প রাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করতে চলেছেন। সেই মঞ্চ প্রার্থী দেওয়ার সঙ্গে হয়তো বাম ও বিজেপি উভয়ের সঙ্গেই আসন সমঝোতায় যাবে। সেক্ষেত্রে তাঁরা ISF’র সঙ্গেও জোট করতে পারে। ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে সেই ‘বিকল্প রাজনীতি’র পোস্টার পরার পর থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বেশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী(Adhir Ranjan Chowdhury)। রীতিমত তেঁড়েফুঁড়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করার পাশাপাশি তিনি এমন সব মন্তব্য করছেন যা জোটের পথে কাঁটা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর তার জেরেই অধীরের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কংগ্রেস(INC) হাইকম্যান্ড। সূত্রে তেমনটাই জানা যাচ্ছে।
২৪’র ভোটে বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড চাইছে বাংলার মাটিতে তৃণমূলের সঙ্গে জোট প্রক্রিয়া মসৃণ করতে। সেই একই লক্ষ্যে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও(Mamata Banerjee) কংগ্রেসকে দক্ষিণ মালদা ও বহরমপুর আসন দুটি ছেড়ে দিতে রাজী আছেন, কেননা উনিশের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এই ২টি আসনই জিতেছিল এ রাজ্য থেকে। কিন্তু অধীরের তা না পসন্দ। তিনি চাইছেন অন্তত ৭টি আসন। তৃণমূল যেন ৭টি লোকসভা কেন্দ্র কংগ্রেসকে ছাড়ে লড়াই করার জন্য। এই ৭টি কেন্দ্র হল – মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর, জঙ্গিপুর, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, রায়গঞ্জ এবং দার্জিলিং। এর পাশাপাশি তাঁর দাবি পুরুলিয়া, বসিরহাট, কৃষ্ণনগর কেন্দ্রেও কংগ্রেস নাকি খুব ভালো অবস্থায় আছে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। একই সঙ্গে তিনি এই মন্তব্যও করেছেন মমতার উদ্দেশ্যে যে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে আমাদের ২টি আসন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত তিনি। তাঁর এই দয়ার দান আমাদের চাই না। আমরা তাঁর এই প্রস্তাব নাকচ করছি। বহরমপুরে হারাবে বলছে, মালদায় হারাবে বলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি। যে কাউকে এখানে পাঠিয়ে দিন। যদি হারাতে পারেন, রাজনীতি করা ছেড়ে দেব। আপনি নিজে আসুন, দেখি কত ক্ষমতা আপনার।’
অধীরের এই মন্তব্য, ভাল ভাবে নেয়নি কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। বিশেষ করে হাইকম্যান্ডের তরফে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে নিজে বার বার অধীরকে সতর্ক করেছেন যে, এমন কোনও আচরণ করা যাবে না যাতে INDIA জোট দুর্বল হয়ে পড়ে। জোট শরিকদের নিয়ে কোনওরকম নেতিবাচক আলোচনা করা যাবে না। কংগ্রেস বিভিন্ন রাজ্যে আসন বণ্টনের বিষয়টি আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু এখন অধীর যেসব মন্তব্য করছেন তাতে এটা পরিষ্কার যে তিনি চাইছেনই না বাংলায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও জোট হোক। তিনি চাইছেন বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাম-বিজেপি-কংগ্রেসের জোট হোক। যদিও মুখে সরাসরি তিনি একবারও সেই কথা বলেননি। তাঁর এহেন বিজেপি বান্ধব অবস্থানের দরুণ এবং প্রদেশ কংগ্রেসের সিংহভাগ নেতাদের তৃণমূল বিরোধী অবস্থানের জন্যই একুশের ভোটে বাংলা থেকে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি উঠে এসেছে বাংলার প্রধান বিরোধী দল হিসাবে। সেই ঘটনা থেকেও কোনও শিক্ষা নিতে চাইছেন না অধীর ও প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা। তাঁর ২৪’র ভোটেও অন্ধ মমতা বিরোধিতার পথেই হাঁটতে চান। এদের এই মনোভাবের জন্যই এখন অধীরের ওপর রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।