নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপি (BJP) মুখপাত্র নূপুর শর্মা (সদ্য বহিষ্কৃত) মন্তব্যের জেরে হিংসা ছড়াল নদিয়ায় (NADIA)। হাওড়া, মুর্শিদাবাদের পর এবার নদিয়ায় চলল তাণ্ডব। বিক্ষোভ মিছিলের পর চলে তাণ্ডব। আক্রমণ করা হয়েছে বেথুয়াডহরি স্টেশনে (STATION)। চলেছে ব্যাপক ভাঙচুর। হল ইট বৃষ্টি। বন্ধ ট্রেন চলাচল।
বিজেপি নেত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তপ্ত একাধিক জায়গা। এবার সেই আঁচ পড়ল নদিয়ায়। বিজেপি নেত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে নদিয়ায় বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই বিক্ষোভ মিছিলের পর বেথুয়াডহরি স্টেশনে চালানো হয় হামলা। চলে ব্যাপক ভাঙচুর। ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। একই সঙ্গে দেখা যায় আতঙ্ক। যাত্রীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক দেখা গিয়েছে। আকস্মিক আক্রমণের জেরে বন্ধ ট্রেন চলাচল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে আরপিএফ, জিআরপি, রাজ্য পুলিশ। বন্ধ করা হয়েছে লালগোলা- রাণাঘাট লাইনে ট্রেন (TRAIN) চলাচল।
উল্লেখ্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গত শনিবার ট্যুইট করেছেন। হিংসা পরিস্থিতি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আগেও বলেছি, দুদিন ধরে হাওড়ার জনজীবন স্তব্ধ করে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে । এর পিছনে কিছু রাজনৈতিক দল আছে এবং তারা দাঙ্গা করাতে চায়- কিন্তু এসব বরদাস্ত করা হবে না এবং এ সবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হবে। পাপ করল বিজেপি, কষ্ট করবে জনগণ?’
গত শনিবার হিংসা বন্ধ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী। এই উত্তেজনার জন্য তিনি সরাসরি দায়ী করেছেন বিজেপি শিবিরকেই। বলেন, ভারত মানে হিন্দু- মুসলমানের মিলনক্ষেত্র। তা নিয়ে এতকাল গর্ব করা হয়েছে। সেই গর্বকে খর্ব করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েকজন ‘চ্যাংড়া মানুষ’ হিংসা ছড়াচ্ছে, ভাঙচুর চালাচ্ছে, পুলিশকে আক্রমণ করছে, সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করছে। তাদের ধরে ধরে জেলে ঢোকানো উচিৎ। অপরাধীদের জেলে ঢোকাক প্রশাসন। পীরজাদার আরও দাবি, এই হিংসা- বিক্ষোভের পেছনে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের সমর্থন আছে, তার ফলেই ৩ দিন ধরে এই হিংসাত্মক পরিস্থিতি।
রাজ্য পুলিশের ডিজি নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে গত শনিবার লিখেছেন, ‘শান্তি নষ্ট হতে দেবেন না। গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। মিথ্যা খবর সম্পর্কে নিকটবর্তী থানায় জানান’। সেই সঙ্গে পোস্ট করেছেন বিশেষ ছবি। হ্যাজট্যাগ দিয়ে লেখা, ‘সত্যের সাথে সুরক্ষার সাথে’, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ ফর ইউ’। ট্যাগ করেছেন রাজ্য পুলিশের অ্যাকাউন্ট।
যে ছবি তিনি পোস্ট করেছেন সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি সতেজ আপেল, যার তলায় লেখা আছে ‘বাস্তব’। অন্য একটি আপেল শুকনো। যার তলায় লেখা ‘গুজব’। আর তার নিচেই লেখা, ‘সত্যের সাথে সুরক্ষার সাথে’। অভিনব এই ছবি দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাস্তব ঘটনা না প্রচার করে গুজব প্রচার করা হচ্ছে অনেক বেশি। আর তা থেকেই বিরত থাকার বার্তা দেন তিনি। শান্তি রক্ষা করার বার্তা দিয়ে তিনি ক্যাপশন লিখেছেন, মিথ্যা খবর জানতে পারলেই তা স্থানীয় থানায় জানাতে।
শনিবার ২ সভা থেকেই ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী বার্তা দেন, হিংসা বন্ধ করার। বলেন, ধর্ম নিয়ে অনেকজনই বাজে কথা বলে কিন্তু তার প্রতিবাদে হিংসার রাজনীতি করলে নবী ক্ষমা করবেন না। আরও বলেন, হিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করা যায় না। কারণ, নবীর প্রেম অন্য ধর্মকেও ভালবাসতে শেখায়।
রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম গত শনিবার দাবি করেন, এই হিংসাত্মক ঘটনার পেছেনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি আছে। তিনি বলেন, বাংলা সম্প্রীতির পীঠস্থান। তা নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তা করতে দেবে না রাজ্য সরকার।