নিজস্ব প্রতিনিধি: দল তাঁকে প্রার্থী করে জয়ের মুখ দেখছিল একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। সেই সুবাদে দল এবারেও তাঁর ওপরে ভরসা রেখেছে। আবারও তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে ভোটের ময়দানে। কিন্তু দলের হাল যে রীতিমত খারাপ সেটা এবার স্বীকারই করে নিলেন স্বয়ং প্রার্থী। আসানসোল(Asansol) লোকসভা কেন্দ্র থেকে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের সাধারন নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়(Babul Supriya?)। হয়েছিলেন দুই দফার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও। কিন্তু সেই মন্ত্রীত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দিতেই বিজেপির দিক থেকে মুখ ফেরান তিনিও। যোগ দেন তৃণমূলে(TMC)। একই সঙ্গে ইস্তফা দেন আসানসোলের সাংসদ পদ থেকেও। সেই সূত্রেই আসানসোলে লোকসভা কেন্দ্রে এবার হতে চলেছে উপনির্বাচন। ঘটনাচক্রে আসানসোলের সঙ্গে যে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রেও উপনির্বাচন হতে চলেছে সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন বাবুল। আর বাবুলের ছেড়ে যাওয়া আসানসোলে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন অগ্নিমিত্রা পাল(Agnimitra Paul)। সেই অগ্নিমিত্রাই কিনা নিজের মুখে জানিয়ে দিলেন, বঙ্গ বিজেপির সংগঠন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। আর সেই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির জেরে এখন তুমুল অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি(BJP) নেতৃত্ব।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য বিজেপি শুক্রবার সন্ধ্যাতেই তাঁদের প্রার্থী হিসাবে দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী তথা আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের নাম ঘোষণা করেছে। আর সেই ঘোষণার ২৪ ঘন্টা আগেই অগ্নিমিত্রা ভরা হাটে দলের হাল তুলে ধরলেন সকলের সামনে। ঠিক কী বলেছেন অগ্নিমিত্রা? প্রখ্যাত এই ফ্যাশান ডিজাইনার জানিয়েছেন, ‘বিজেপির সংগঠন এখন একটু নড়বড়ে হয়ে আছে। এখানকার প্রার্থী হিসাবে দলের তরফে আমার নামটা ঘোষণা হওয়া ভীষণই অপ্রত্যাশিত। তার জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আসানসোলে যে কেউ আসতে পারে। কিন্তু তাঁরা ভোটে জিতে যাবেন এটা এখনই ভেবে নেবেন না। মি. সিনহা হোক, বা মি. ঘোষ বা মি. চোপড়া যে কেউ আসতে পারেন বাইরে থেকে। তাঁরা সকলেই আসানসোলে স্বাগত কিন্তু ভোটে জেতার জন্য নয়। আসানসোলের মানুষ কোনও বহিরাগতকে বিশ্বাস করবে না। মুম্বইয়ের অভিনেতা হিসেবে আসানসোলে স্বাগত। কিন্তু, বহিরাগত মানুষকে আসানসোলের মানুষ ভোট দেবে না।’
ঘটনা হচ্ছে ২০১১ সালের পরিবর্তনের পরে রাজ্যের প্রায় সব লোকসভা আসনেই অন্তত একবার করে ঘাসফুল ফুটেছে। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র ৪টি লোকসভা কেন্দ্র। দার্জিলিং, উত্তর মালদা, দক্ষিণ মালদা, বহরমপুর ও আসানসোল। বাংলার ক্ষমতা দখলের এক দশকের পরেও আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে একবারের জন্যও জয়ের মুখ দেখেনি জোড়াফুল শিবির। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল এবার বলিউডের অভিনেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শত্রুঘ্ন সিনহাকে আসানসোল তাঁদের প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেছে। কার্যত এক ঢিলে তৃণমূল দুই পাখি মেরে বসে আছে। প্রথমত শত্রুঘ্ন আগে বিজেপিতেই ছিলেন। মোদি জমানায় তিনি কোনঠাসা হয়ে পড়েন। তার জেরে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর তৃণমূলে যোগদান। এবার তিনি প্রার্থীও হয়েছেন। তিনি লোকসভায় গেলে নিঃসন্দেহে তা মোদি-শাহের কাছে একটা বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠবে। এছাড়া আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের একটা বড় অংশের ভোটার হিন্দিভাষী, যাদের আদি বাড়ি বিহার ও উত্তরপ্রদেশে। সেই ভোটব্যাংক নিজেদের দিকে টানতে তৃণমূলের বাজি শত্রুঘ্ন। কিন্তু এখন শত্রুঘ্নের সেই জয় ঠেকাতেই বিজেপি বাজি রেখেছে অগ্নিমিত্রার দিকে।
কেননা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৫টিতেই বড় ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ওই ৫টি বিধানসভা কেন্দ্র হল পাণ্ডবেশ্বর, রাণিগঞ্জ, জামুড়িয়া, আসানসোল উত্তর ও বারাবনী। এই ৫টি কেন্দ্রেই তৃণমূল জিতেছে সাড়ে ৩ হাজারেরও থেকে ২৩ হাজারেরও ভোটের ব্যবধানে। সেই নির্বাচনে বিজেপি যে দুটি আসনে জয়ী হয়েছিল সেই কুলটতে পদ্মপ্রার্থী জিতেছিলেন মাত্র ৬৭৯ ভোটে। অপর যে কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছিল তা হল আসানসোল দক্ষিণ। সেখানেই ৪ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন অগ্নিমিত্রা পাল। এলাকারই মেয়ে হওয়ায় সেই নির্বাচনে অগ্নিমিত্রা যে বাড়তি সহায়তা পেয়েছিল সেটা বিজেপির নেতারা স্বীকারও করেন। তাই বাবুল সুপ্রিয়র ছেড়ে যাওয়া আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র ধরে রাখতে বিজেপি অগ্নিমিত্রার ওপরেই বাজি রেখেছে। কেননা সন্দেহ নেই আসানসোল ধরে রাখা এখন বিজেপির কাছে রীতিমত প্রেস্টিজ ফাইট। কেননা একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে হওয়া সব নির্বাচনেই গোহারা হেরে চলেছে বিজেপি। এখন একটা জয়ের মুখ না দেখলে দলটাই বাংলা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই অবস্থায় বিজেপি যাকে প্রার্থী করল সেই অগ্নিমিত্রাই দলের হালের দশা ভরা হাটে ভেঙে দিয়ে দলের মুখ পুড়িয়ে দিলেন।