নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের জয় তাঁদের অতিবড় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। ভেবেছিলেন ওই ঝড়েই খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে তৃণমূল। যদিও সেই হিসাব মেলেনি। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হেরেও ঘুম ভাঙেনি তাঁদের। শেষে বাইশের পুরনির্বাচনে নিজেরাই উড়ে গেলেন খড়কুটোর মতো। একের পর এক শহরে খাতাই খুলতে পারেননি তাঁরা। আর সেই পরাজয়ের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ধেয়ে আসতে শুরু করল কটাক্ষ বাণ, আর সেটাও দলেরই নেতা থেকে বিধায়কদের তরফ থেকে। সেই বাণে বিদ্ধ হলেন খোদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও। নজরে মল্লভূম বাঁকুড়া(Bankura)।
বাঁকুড়ার ৩টি পুরসভাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। জেলার সদর শহর বাঁকুড়া টাউনের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ৩টিতে জয়ী হয়েছে নির্দলরা। বিজেপি শূন্য। জেলার অন্যতম মহকুমা বিষ্ণুপুরের ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। নির্দলরা সেখানে জিতেছে ৩টি আসনে। বিজেপি পেয়েছে ২টি আসন ও কংগ্রেস ১টি আসন। জেলার অপর পুরসভা সোনামুখীতে ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল, ৪টিতে নির্দলরা ও ২টিতে বামেরা। বিজেপি এখানেও শূন্য। মানে মল্লভূমের ৩ পুরসভার মোট ৫৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছে ৪৩টি আসনে। নির্দলরা পেয়েছে ১০টি আসন। বাম ও বিজেপি পেয়েছে ২টি করে আসন এবং কংগ্রেসের প্রাপ্তি মাত্র ১টি আসন। শুধু তাই নয়, বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার(Subhash Sarkar) ও বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নিলাদ্রী শেখর দানার বাড়ি বাঁকুড়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেই ওয়ার্ডেই কিনা চতুর্থ হয়েছেন পদ্মপ্রার্থী। ঠিক কতটা জনবিচ্ছিন্নতা থাকলে আর কতটা চূড়ান্ত প্রত্যাখানের মনোভাব থাকলে এই ফল হয়, সেটাই এখন বিজেপিকে ভাবাচ্ছে।
এই ফলকেই তুলে ধরে এবার দলের রাজ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি জেলা নেতৃত্বকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ হানলেন দলেরই বিধায়ক অমরনাথ শাখা(Amarnath Sakha)। বাঁকুড়া জেলারই ওন্দা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত এই বিজেপি(BJP) বিধায়ক এদিন কারোর নাম না করেই আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে। বলেছেন, ‘জেলা ও রাজনীতির ভূগোল জানে না এমন লোকেদের প্যারাসুটে করে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে নেতা হিসাবে। অথচ তারা রাজনীতির লোক নয়। এর জেরেই ভরাডুবি ঘটেছে। পুরনির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে নেতৃত্বর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত। কারণ লোকসভায় ভালো ফল করার পর বিধানসভায় হার এবং তার পরবর্তী সময়ে সংগঠনের যে দূর্বলতা তা আমরা শোধরানোর চেষ্টা করিনি। আমাদের নেতৃত্বের জন্যই এই ভরাডুবি। উপরমহলকে বুঝতে হবে সংগঠন থাকলে তবেই দল থাকবে।’
অমরনাথের এই ক্ষোভ যে সঠিক সেটা মানছেন দলের নীচুতলার নেতা থেকে কর্মীরাও। তাঁরাও জানাচ্ছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মানুষের উন্নয়নের জন্য যা করেছে তার ছিঁটেফোঁটাও করেনি মোদি সরকার। স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, রূপশ্রী, কন্যাশ্রী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের বিকল্প কিছু তুলে ধরতে পারেনি বিজেপি। মানুষই বা কী দেখে ভোট দেবে। বাঁকুড়া শহরে তো সাংসদ আর বিধায়কের দেখাই পাওয়া যায় না। সেখানে তাঁদের ওয়ার্ডে বিজেপি চতুর্থ হবে নাতো আর কে হবে! তৃণমূলের(TMC) নেতাদেরও দাবি, সুযোগ পেয়েও মানুষের জন্য কাজ করেনি বিজেপি। তাই পরাজয়ের ধাক্কা খেয়ে মুখ লুকোচ্ছেন সাংসদ, বিধায়ক সহ বিজেপির জেলা নেতৃত্বরা।