নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি স্বঘোষিত মহারাজ। রাজবংশী(Rajbangshi) সম্প্রদায়ের একাংশের কাছে কার্যত তিনি রাজার মতোই সম্মান পান। পদ্মশিবির তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ(Rajyasabha MP) করেছিল রাজবংশী সম্প্রদায়ের ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে। শুধু তাই নয়, তিনিই বাংলা(Bengal) থেকে বিজেপির একমাত্র রাজ্যসভার সাংসদ। আর এখন তিনিই কিনা নিজেকে বিজেপি(BJP) থেকে পৃথক হিসাবে দেখাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এখন তাঁকে নিয়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ নেমে এসেছে বঙ্গ বিজেপির শিবিরে। এমনকি সূত্রে জানা গিয়েছে এই ঘটনায় দলের অন্দরেই প্রশ্নের দলেই মুখে পড়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপিরই এক বিধায়ক। আতস কাঁচের নীচে অনন্ত মহারাজ(Ananta Maharaj)।
একুশের ভোটে বিজেপি বাংলা থেকে ৭৭জন বিধায়ক পেয়েছিল। যদিও এখন তা কিছুটা কমে গিয়েছে। সরকারি ভাবে বাংলায় বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা এখন ৭৪ হলেও বেসরকারি ভাবে তা নেমে এসেছে ৬৮-তে। কেননা ৬জন বিধায়ক ইতিমধ্যেই তৃণমূলে চলে এসেছেন। তবুও এই প্রথম বাংলা থেকে নিজ শক্তিতে দলের কাউকে রাজ্যসভায় পাঠানোর মতো ক্ষমতায় ছিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু দেখা গেল, দলের কাউকে বাংলা থেকে রাজ্যসভায় না পাঠিয়ে পদ্মশিবির বেছে নিয়েছিল উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মুখ অনন্ত মহারাজকে। বঙ্গ বিজেপির একাংশের দাবি, অনন্তকে বাছাই করার জন্য মূলত দুটি ঘটনা উঠে এসেছিল। এক, রাজবংশী সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্ক পদ্মশিবিরে ধরে রাখা। কেননা এই সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্কই বিজেপিকে উনিশের লোকসভা ভোটে এবং একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ফায়দা দিয়েছে। সেই ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রেখে ২৪’র লোকসভা নির্বাচন এবং ২৬’র বিধানসভা নির্বাচনে ফায়দা পেতে চাইছিল পদ্মশিবির। এর পাশাপাশি অনন্তকে রাজ্যসভার প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরার জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এবং কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে-র বিশেষ ভূমিকা ছিল বলেও দাবি বঙ্গ বিজেপির একাংশের।
কিন্তু সেই অনন্ত এখন বিজেপি থেকে দূরত্ব তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। অনন্তের এই ভোলবদল কার্যত ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সময় থেকেই বঙ্গ বিজেপির নেতাদের চোখে পড়ছিল। তাঁকে দলের হয়ে প্রচারে নামার বার্তা বার বার দেওয়া হলেও শেষমেষ তিনি মাত্র ১দিন সেখানে প্রচারে গিয়েছিলেন। আর এখন তো ধূপগুড়ির হারের পরে রীতিমত সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি নিজেকে বিজেপির থেকে পৃথক হিসাবে তুলে ধরছেন যা নিয়ে একাধারে ক্ষোভ ও হতাশার মুখে পড়ে গিয়েছে পদ্মশিবির। ধূপগুড়িওর হার অনন্ত নিজের ঘাড়ে নিতে চাননি। বরঞ্চ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি শেষ লগ্নে একদিনই প্রচারে গিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষের প্রচুর উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছি। স্থানীয় নেতৃত্বের কোনও ত্রুটির জন্য পরাজয় হতে পারে। যদিও এই বিষয়টি আমি তেমন ভাবে কিছু বলতে পারব না। এটা বিজেপি দল বলতে পারবে।’ আর এখানেই বিজেপির নেতা থেকে কর্মীদের প্রশ্ন, ‘বিজেপি দল’ বলতে উনি কী বোঝাতে চাইছেন? উনি কী বিজেপির সাংসদ নন? তিনি কী বিজেপি ছেড়ে চলে গিয়েছেন? যা যেতে চাইছেন?
কার্যত অনন্তের এই ভোলবদলের পিছনে অনেকেই মনে করছেন বাংলা ও দেশের বদলে যাওয়া রাজনৈতিক সমীকরণ দায়ী। অনন্তও সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন দিল্লিতে বিজেপির শাসন আর বেশি দিনের নয়। আর তাই সময় থাকতে থাকতেই বিজেপির থেকে সজ্ঞানে দূরত্ব তৈরি করছেন। আগামী দিনে যদি তাই তাঁকে দলত্যাগ করতে দেখা যায় বা জার্সি বদলের ঘটনায় দেখা যায় তাহলে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। তবে তাঁর এই ভোলবদলের জেরে এখন দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে কার্যত প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বলেই সূত্রে জানা গিয়েছে। কেন রাজ্যসভার প্রার্থী হিসাবে অনন্তের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, মূলত সেই প্রশ্নই ধেয়ে এসেছে। একই সঙ্গে অনন্তের ভূমিকায় ক্ষোভ ছড়াচ্ছে বিজেপির নীচুতলার কর্মীদের মধ্যেও। তাঁরা এখন প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলছে, ‘অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে কী লাভ হল!’