নিজস্ব প্রতিনিধি: পুরনিগম তৈরি হয়েছে বহুকাল আগেই। বাম জমানা পর্যন্ত তাঁর ব্যপ্তি ছিল ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যেই। তৃণমূলের জমানায় আশেপাশের ৩টি পুরসভাও এই পুরনিগমের আওতায় নিয়ে চলে আসা হয়েছে। তাতেই শহরের ওয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৬। সেই শতাধিক ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আগামিকাল বুথমুখী হবেন এটা ঠিক করতে যে আগামী ৫ বছর এই শহরের পুরবোর্ড কাদের দখলে থাকবে সেটা ঠিক করতে। নজরে আসানসোল পুরনিগম। আগামিকাল রাজ্যের যে চারটি পুরনিগমে ভোটগ্রহণ করা হবে তার মধ্যে থাকছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার সদর শহর ও রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আসানসোলও। কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিজেপিকে ভোগাচ্ছে বাবুল ফ্যাক্টার। ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। বিজেপির টিকিটে জেতা এই তারকা সাংসদ হয়েছেন দুই দফার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও। তাঁর করে যাওয়া একাধিক উন্নয়নমুখী প্রকল্প যা শহরবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। সেই বাবুল বিজেপি ছেড়ে এখন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ঝুলিতে। আর তাই এবারের পুরনির্বাচনে আসানসোলে পদে পদে বাবুল ফ্যাক্টারে ধাক্কা খাচ্ছে বিজেপি যা কিছুটা হলেও ভোটযুদ্ধে এগিয়ে দিয়েছে তৃণমূলকে।
বাবুলের করে যাওয়া একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে শহরবাসীর কোনও অভিযোগ নেই। এমনকি বাবুল বিজেপিতে থাকাকালীন সময়েও তৃণমূলও তাঁর বিরুদ্ধে বড় কোনও অভিযোগ তুলতে পারেনি। এহেন বাবুলের কেন্দ্রে মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়া ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেনি আসানসোলবাসী। বাবুলের দলত্যাগ তাই এই শহরে বেশ ধাক্কাই দিচ্ছে বিজেপিকে। যদিও বেশ বড় মুখে তাঁরা দাবি করছে, আসানসোলবাসী তাঁদের পাশেই থাকছেন। বাবুলের দলত্যাগ এই নির্বাচনে কোনও ছাপই ফেলবে না। মানুষ নরেন্দ্র মোদির সরকারের করা দেশ জোড়া উন্নয়নকে দেখেই ভোট দেবেন বিজেপিকে। আদতে বিজেপি বড় মুখে যে দাবিই করুক না কেন আসানসোল পুরনির্বাচন তো বটেই, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনও বিজেপির কাছে প্রেস্টিজ ফাইট হয়ে উঠেছে। আগামিকাল আসানসোল পুরনিগম্নের ভোটগ্রহণ করা হলেও আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের তারিখ এখনও ঘোষণে করেনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই দুই নির্বাচনই বিজেপির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুটিতেই তাঁরা জিতলে আসানসোলে গেরুয়া শিবির কার্যত শেকড় গেঁথে ছড়িয়ে পড়বে রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে। আর যদি বিজেপি হাতে তাহলে তার প্রভাবে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মতো জেলায় বিজেপির প্রভাবে ধাক্কা পড়বে।
তৃণমূল অবশ্য বেশ আশাবাদী, আসানসোলের পুরবোর্ড তাঁদের দখলেই থাকবে। শহরের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ওয়ার্ডে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তাঁরা। তাঁদের এটাও আশা, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন যবেই হোক না কেন, সেই নির্বাচনেও জয়ী হবে তৃণমূল। ভোট বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন বিজেপি পুরনির্বাচনে ভালো লড়াই দিলেও শেষ হাসি হাসবে তৃণমূলই। বোর্ডও তাঁরাই গড়বে। আর প্রথাগত ভাবে দেখা গিয়েছে আসানসোলবাসীর ভোট রাজ্যের শাসক দলের পক্ষেই থেকে এসেছে বরাবর। তাই এবারের পুরনির্বাচনেও তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা তীব্র। কার্যত একক শক্তিতেই তাঁরা বোর্ড দখল করার মতো অবস্থায় আছে। দেখার বিষয় এটাই বিজেপি সহ বামেরা এই নির্বাচনে কটা আসন পায়। দেখার বিষয় কংগ্রেস কিছু চমক দিতে পারে কিনা। তবে এই নির্বাচনে যারাই জিতুক না কেন আগামী দিনে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের লড়াইয়ে তাঁরা কিছুটা হলেও এগিয়ে থেকে লড়াই শুরু করবেন এটা হলফ করেই বলা যায়।