নিজস্ব প্রতিনিধি: সকাল থেকেই তেঁড়েফুঁড়ে চলছিল শাসক শিবিরকে আক্রমণ। চলছিল দলীয় স্তরে আন্দোলনের প্রস্তুতিও। কিন্তু সবটাই খেলো হয়ে গেল খুনের ঘটনায় ১জন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতেই। কেননা সেই ধৃতকে জেরা করে পুলিশ বেআইনি অস্ত্রের বিক্রির যোগ পেয়ে গিয়েছে। আর তার জেরেই এখন ব্যাকফুটে বিজেপি। উত্তর দিনাজপুর জেলায় দলের নেতা খুনের ঘটনায় তাই শেষ পর্যন্ত নিজেদের মুখরক্ষা করতে মঙ্গলবার জেলায় মাত্র ৮ ঘন্টার বনধ ডাকলো বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হারের মুখ দেখার পর থেকেই বাংলা জুড়ে সমর্থন কমছে বিজেপি। এই অবস্থায় বাংলা বনধ ডাকলে যে দলের মুখ পুড়তে বাধ্য সেটা আঁচ করেই বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব এদিন শুধুমাত্র ৮ ঘন্টার জেলা বনধের ডাক দিয়েই ক্ষান্ত হলেন। সেই সঙ্গে হলেন হাসির খোরাক।
রবিবার রাতে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ মহকুমার ইটাহার ব্লকের দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজবাড়ি এলাকায় নিজের বাড়ির সামনেই খুন হন জেলার বিজেপির যুব মোর্চা সভাপতি মিঠুন ঘোষ(৩২)। এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমত রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে ওঠে এদিন সকাল থেকেই। মিঠুনের পরিবারের তরফে তো বটেই বিজেপির তরফেও অভিযোগ তোলা হয় যে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি মিঠুনের মাও দাবি করেন, ‘তৃণমূলের লোকজন সবসময় শাসাত মিঠুনকে বিজেপি করার জন্য। বিজেপি করত বলেই আমার ছেলেকে ওরা খুন করেছে।’ ঘটনার জেরে উত্তর দিনাজপুর জেলায় চলে আসেন বঙ্গ বিজেপির নয়া সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। জেলার সদর শহর রায়গঞ্জের জেলা পার্টি কার্যালয়ে তিনি দলের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকও করেন। সেই বৈঠকেই ঠিক হয়েছিল আগামিকাল মিঠুনের খুনের ঘটনার প্রতিবাদে বাংলা বনধের ডাক দেবে বিজেপি। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় পুলিশ খুনের ঘটনায় ১জনকে গ্রেফতার করায়।
রবিবার মিঠুনকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন সে তাঁর ভাইকে দুটি নাম জানিয়েছিল। সেই দুই নাম হল সুকুমার ঘোষ ও সন্তোষ মোহন্ত। পুলিশ এদিন সেই দুই নাম পেয়েই সন্তোষকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাকে জেরা করতেই বার হয় চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায় রবিবার রাতে মিঠুন, সন্তোষ আর সুকুমার একটি হোটেলে খাওয়াদাওয়া করেছিল। এরপর মিঠুন বাড়ি থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে দুজনকে দেখায়। সেই সময় সুকুমার ঘোষের হাতে থাকা বন্দুক থেকে আচমকা গুলি বেরিয়ে মিঠুনের শরীরে লাগে। তাতেই সে মারা যায়। এই ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয় গোটা ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগই নেই। মিঠুন বেআইনি অস্ত্র বিক্রির চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল। সেই অস্ত্র দেখাতে গিয়েই ঘটেছে দুর্ঘটনা। এরপরেই রাতারাতি প্ল্যান বদলে যায় বঙ্গ বিজেপির। রায়গঞ্জে দলের পার্টি অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কার্যত বিরস বদনে জানান, দলের যুব মোর্চার নেতা খুনের ঘটনায় আগামীকাল মঙ্গলবার ৮ ঘন্টার জন্য জেলায় সাধারণ ধর্মঘট পালন করা হবে। সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টো পর্যন্ত এই ধর্মঘট পালন করা হবে।