নিজস্ব প্রতিনিধি: বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সাগরের জলের উচ্চতা বাড়ছে। আর তাতেই বিপদ বাড়ছে সুন্দরবন সহ কলকাতার। কেননা সুন্দরবনের আকার ও আয়তন একদিকে যেমন ক্রমশ কমছে তেমনি বাংলার দক্ষিন উপকূলবর্তী এলাকার বেশ কিছু দ্বীপ ভাঙনের জেরে তলিয়ে যাচ্ছে সাগরের বুকে। একই সঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তনের জেরে বাংলার বুকে ঘন ঘন আছড়ে পড়ছে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়। বার বার ধেয়ে আসছে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তও। আর তাঁর জেরে জলোচ্ছ্বাসে বাংলার উপকূলবর্তী এলাকা ভেসে যাচ্ছে। ম্যানগ্রোভ অরণ্য না থাকার জন্য সেই জলোচ্ছ্বাসে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলা পূর্ব মেদিনীপুর। তবে সুন্দরবনের জন্য কিছুটা হলেও রেহাই পাচ্ছে দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলা। কিন্তু সেই সুন্দরবনও খুব ভালো নেই। কমছে তার ঘনত্ব। আর তাই সুন্দরবনকে বাঁচাতেই রাজ্য সরকার সাড়ে ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই গাছের যোগান বাড়াতে রাজ্য বন দফতর ৮০টি ম্যানগ্রোভ কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিবেশবিদরা বার বার সতর্ক করে দিচ্ছেন সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে কলকাতা সহ দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলি জেলাকে বাঁচাতে হলে সুন্দরবনকে রক্ষা করতেই হবে। সেই সতর্কবার্তায় কান দিয়ে তাই রাজ্য সরকারও উদ্যোগী হয়েছে সুন্দরবনকে বাঁচাতে। সাড়ে ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা সেই উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছে। সেই ম্যানগ্রোভ গাছের চারা যাতে সহজেই পাওয়া যায় তাঁর জন্যই এবার রাজ্য বন দফতর দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৮০টি ম্যানগ্রোভ কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ৪০টি, উত্তর ২৪ পরগনায় ২০টি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ২০টি কেন্দ্র তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা নিজ উদ্যোগেই ম্যানগ্রোভ কেন্দ্র তৈরি করছি। ম্যানগ্রোভ কেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলে আর আমাদের ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ জোগাড় করতে হবে না। তাতে সুন্দরবনকে বিশ্ব উষ্ণায়নের হাত থেকে বাঁচাতে সুবিধাই হবে।’
গত বছর সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও চলতি বছরের যশ’র জলোচ্ছ্বাস বাংলার দুই উপকূলবর্তী এলাকায় প্রাণহানীর পাশাপাশি প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। এর পরে পরেই রাজ্য সরকার ‘প্রকৃতি রক্ষক’ নামে একটি প্রকল্প চালু করে। সেই সঙ্গে সমুদ্র উপকুলবর্তী এলাকা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়। সেই কমিটির সুপারিশ মেনেই কালো বাইন, পেয়ারা বাইন, কাঁকড়া বকুল, কাঁকড়া গর্জন, হরগোজা, খালসি ধানী, খালসি টক ক্যাওড়া প্রভৃতি জাতের ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সুন্দরবনের বুকে। মোট সাড়ে ১৫ কোটি গাছ লাগানো হবে। কিন্তু সেই গাছের চারা যোগানে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তাঁর জন্য এই ৮০টি ম্যানগ্রোভ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, আমডাঙা, বাদুড়িয়া, হাসনাবাদ ও মিনাখাঁ এলাকায় ১ কোটি ২২ লক্ষ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায জেলার বাসন্তী, ক্যানিং, কুলতলি, সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ এলাকায় ১২ কোটি ৬৮ লক্ষ এবং পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি, নন্দীগ্রাম, রামনগর, কাঁথি প্রভৃতি এলাকায় ১ কোটি ৬১ লক্ষ ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর কাজ এখন চলছে বলে জানা গিয়েছে রাজ্য বন দফতর সূত্রে। ইতিমধ্যে কয়েক কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। এত দিন বন দফতরের নিজের ম্যানগ্রোভ কেন্দ্র না থাকায় তা নানা জায়গা থেকে গাছ জোগাড় করতে হচ্ছিল। কিন্তু নিজেদের ম্যানগ্রোভ কেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলে, আর বাইরে থেকে গাছ জোগাড় করতে হবে না বন দফতরকে।