নিজস্ব প্রতিনিধি: কালিপুজোর মুখে আরও একদফা বৃষ্টিতে ভিজতে চলেছে বাংলা(Bengal)। সৌজন্যে ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপ। তবে দিল্লির মৌসম ভবন(Mausam Bhawan) থেকে কলকাতার(Kolkata) আলিপুর আবহাওয়া দফতর এটা মানতে নারাজ যে বঙ্গোপসাগরের(Bay of Bengal) বুকে কালিপুজোর আগে কোনও সুপার সাইক্লোনের(Super Cyclone) জন্ম হতে চলেছে। বরঞ্চ তাঁরা বেশ জোর গলাতেই বলছেন, বঙ্গোপসাগরই শুধু নয় ভারতীয় উপমহাদেশের চৌহদ্দির মধ্যে আগামী ১ সপ্তাহে কোনও রকম সুপার সাইক্লোনের জন্মের কোনও সম্ভাবনাই নেই। আন্দামান সাগরে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণাবর্ত বঙ্গোপসাগরে পা রেখে নিম্নচাপের চেহারা নেবে। ক্রমে সে শক্তি বাড়িয়ে অতি গভীর নিম্নচাপের চেহারা নেবে। কিন্তু কখনই তা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে না। কার্যত সাগরের বুকে বাঁক নিয়ে ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার সময় থেকেই সাগরের বুকে তার শক্তিক্ষয় শুরু হয়ে যাবে। তবে এই নিম্নচাপের হাত ধরে আগামী বৃহস্পতিবার থেকেই বৃষ্টিতে ভিজবে বাংলা। সঙ্গে বইবে দমকা ঝোড়ো হাওয়া।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘আন্দামান সাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। যা ক্রমশই পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। আগামী বৃহস্পতিবার তা নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর শনিবার নাগাদ দক্ষিণ পশ্চিম ও পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে তা গভীর নিম্নচাপের রূপ নেবে। ফের এই সিস্টেম বাঁক নিতে পারে। তবে কোনওভাবেই তা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে না। নিম্নচাপের দরুণ ২০ তারিখ থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হবে। উপকূলের জেলাগুলিতে প্রবল বৃষ্টি হতে পারে। কোন কোন জেলায় কোন কোন দিন বৃষ্টি হবে তা বুধবারই জানিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের দেশের আইএমডি নির্ভুল পূর্বাভাস দেয় ঝড়ের ক্ষেত্রে। তাই অন্য কোনও মডেল বা এজেন্সির পূর্বাভাস অনুসরণ না করে ভারতীয় গবেষণার ওপরই আস্থা রাখা ঠিক হবে। কালিপুজোর সময় বাংলায় সাইক্লোনের তাণ্ডব চালানোর কোনও সম্ভাবনাই নেই।’
দিল্লির মৌসম ভবনের দাবি, মধ্য আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরে সোমবারই একটি ঘূর্ণাবর্তের জন্ম হয়েছে। আগামী ২০ অক্টোবর তা নিম্নচাপে পরিণত হবে। ২১ অক্টোবর তা সুস্পষ্ট নিম্নচাপ এবং ২২ অক্টোবর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। প্রাথমিকভাবে এউ নিম্নচাপ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এর জেরে তামিলনাড়ু, উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলাঙ্গানা, দক্ষিণ কর্ণাটক এবং কেরলে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, কারাইকাল, কেরল এবং মাহেতে বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ২০ অক্টোবর পর্যন্ত আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘটনাচক্রে গতকাল অর্থাৎ সোমবার কলকাতায় এসেছিলেন দিল্লির মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘এই ঘূর্ণাবর্ত সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে, এমন কথা আমরা আগেও বলিনি, এখনও বলছি না। ভারতীয় মৌসম ভবনের কথায় ভরসা রাখা উচিত। কোনও পিএইচডি স্কলার কী বললেন, সেটা মেনে চলা উচিত নয় বলে আমার মনে হয়। এই দফায় বঙ্গোপসাগরে কোনও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও সেটি সুপার সাইক্লোন পর্যায়ে যাবে না।’
উল্লেখ্য, বিদেশি আবহাওয়া মডেলের পূর্বাভাসের ভিত্তিতে সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়াচ্ছে যে ১৮ থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সুপার সাইক্লোন সৃষ্টি হতে চলেছে। মৃত্যুঞ্জয়বাবু দাবি, এরকম গুজবে কান না দেওয়াই উচিত। এসব ক্ষেত্রে ৭ দিনের আগে কোনও অবস্থাতেই পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। তাই আপাতর সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।