নিজস্ব প্রতিনিধি: ৬ বছর আগে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের যে জেলায় সব থেকে বেশি গেরুয়া ঝড় চোখে পড়েছিল, তা হল পুরুলিয়া(Purulia)। সেই নির্বাচনে জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম পঞ্চায়েত গিয়েছিল বিজেপির দখলে। বেশ কিছু পঞ্চায়েত সমিতিও তাঁদের দখলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। যদিও জেলা পরিষদ স্তরে সেভাবে বিজেপির উত্থান চোখে পড়লেও তা ক্ষমতা দখলের থেকে অনেকটাই দূরে থেকে গিয়েছিল। সেই নির্বাচনের ছায়াতেই হয়েছিল উনিশের লোকসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র গিয়েছিল বিজেপির দখলে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও সেই আধিপত্য ধরে রেখেছিল বিজেপি(BJP)। জেলার ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬টিই গিয়েছিল বিজেপির দখলে। কিন্তু গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে, সেই পুরুলিয়ার মাটিতেই যেন নিজেদের আধিপত্যবাদ হারিয়ে ফেলছে বিজেপি। আর দ্রুত সেই স্থান দখল করে নিচ্ছে তৃণমূল(TMC)। ২৪’র ভোট প্রচার যখন শুরু হয়ে গিয়েছে, তখনও দেখা যাচ্ছে, প্রচার সেভাবে জমছেই না বিজেপির। কিন্তু তুলনায় তৃণমূল প্রার্থী ভাল ভিড় টানছেন তাঁর প্রচারে।
কথায় বলে, দিনের শুরুটা দেখলেই বোঝা যায়, বাকি দিনটা কেমন যাবে। সেই একই ভাবে কোনও নির্বাচনে প্রার্থীর প্রচারকালে তাঁর পিছনে থাকা ভিড়ই বলে দেয়, ফলাফল কী হতে চলেছে। পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের জন্য বিজেপি এবারেও ভরসা রেখেছে এখানকার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর(Jyotirmoy Singh Mahato) ওপরে। অন্যদিকে তৃণমূলের বাজি শান্তিরাম মাহাতো(Shantiram Mahato)। ঘটনা হচ্ছে, উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচার কর্মসূচীগুলিতে যেভাবে হাজারো মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ত, সেই ভিড়টাই এবারে অনুপস্থিতি জ্যোতির্ময়ের সঙ্গে। মাত্র জন ১০-১২ লোক নিয়ে গ্রামে গ্রামে বা শহরে প্রচার করছেন জ্যোতির্ময়। অন্যদিকে তৃণমূলের প্রার্থী শান্তিরামের সঙ্গে কিবা দিন, কিবা রাত লেগে আছেন অন্তত জন ৫০ দলীয় কর্মী ও সমর্থক। প্রচারের এই ফারাকটাই বলে দিচ্ছে এবারে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে ঠিক কী হতে চলেছে। উনিশের লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬টিতেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোটে দেখা যায় সেই ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২টিতে জিতে গিয়েছে তৃণমূল। বাকি ৫টি অবশ্য বিজেপির দখলেই আছে।
উনিশের লোকসভা ভোটে মানবাজার ছাড়া বাকি সবক’টি বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপি লিড পেয়েছিল। বাঘমুণ্ডিতে প্রায় ৫২ হাজার, বলরামপুরে প্রায় ৩৫ হাজার, জয়পুরে প্রায় ৩১ হাজার, পুরুলিয়াতে ৩৬ হাজার, কাশীপুরে ১৬ হাজার, পাড়া বিধানসভায় প্রায় ৪১ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। শুধুমাত্র মানবাজারে তৃণমূল প্রায় ১০ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। একুশের বিধানসভা ভোটে ওই ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি ৫টি এবং তৃণমূল কংগ্রেস ২টি আসন পায়। মানবাজার এবং বাঘমুণ্ডিতে জয়ী হয় তৃণমূল। বাকি বিধানসভাতেও প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ভোটের ব্যবধান বেশ খানিকটা কমে। সেই হিসাবে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে পিছিয়ে থাকার পরে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করা তৃণমূলের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে থেকে লড়াই শুরু করছে বটে, কিন্তু এটা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার যে, উনিশের লোকসভা ভোটে বিজেপির পালে যে হাওয়া ছিল সেটা এই ২৪’র ভোটে ছিঁটেফোঁটাও নেই।