নিজস্ব প্রতিনিধি: স্বাধীনতার পরে এই প্রথম। রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় একটি স্কুল থেকেই ২২জন পড়ুয়া উচ্চমাধ্যমিকের মেধা তালিকায় উঠে এসেছেন। আর তা নিয়েই এবার কদর্য রাজনীতি শুরু করে দিল বিজেপি। এতদিন গেরুয়া শিবিরকে দেখা যেত রাজ্য সরকার, তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ জোড়াফুলের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করতে। এবার সেই বিজেপি নেতাদের দেখা যাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিকের ফল নিয়েও কদর্য রাজনীতি শুরু করতে। চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এক থেকে দশম স্থানে যারা যারা উঠে এসেছেন তাঁদের নিয়েই প্রকাশিত হয়েছে মেধাতালিকা। আর সেই তালিকায় এবার ঠাঁই পেয়েছে মোট ২৭২জন। এদের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর(Paschim Midnapur) জেলার খড়গপুর মহকুমার পিংলা(Pingla) ব্লকের জলচক(Jalchak) নটেশ্বরী নেতাজি বিদ্যায়তনের ২২জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। দ্বিতীয় থেকে দশম স্থান পর্যন্ত এই স্কুলের ২২জন পড়ুয়া রয়েছেন। এবার এই ফলাফলকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে চিহ্নিত করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে ইমেল করে চিঠি দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজেপির(BJP) সহ সভাপতি তথা শিক্ষক নেতা ডক্টর শংকর গুছাইত(Shankar Ghuchait)।
শনিবার ওই নেতা ইমেল করেছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল কাউন্সিল অফ হায়ার সেকেন্ডারি এডুকেশন(WBCHSE) এর রাজ্য ও আঞ্চলিক কর্তাদের। যদিও চিঠিতে কোনও শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীর নাম উল্লেখ করেননি তিনি। কেবলমাত্র জলচক নটেশ্বরী নেতাজি বিদ্যায়তনের(Nateshwari Netaji Bidyatan) উদাহরণ দেখিয়ে তিনি চিঠি দিয়েছেন। আর সেই চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, অবিলম্বে এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার উত্তরপত্র ও ফলাফল খতিয়ে দেখুক সংসদ। কেননা জলচক নটেশ্বরী নেতাজি বিদ্যায়তনের ফলাফল অস্বাভাবিক। অবিলম্বে এই ভুল শোধরাক সংসদ। শনিবার এই নিয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকও ডাকেন শংকর গুছাইত। সেখানে তিনি বলেন, ‘জলচক নটেশ্বরী নেতাজি বিদ্যায়তনের যে ফলাফল হয়েছে তা অনেকটাই অস্বাভাবিক। এইরকম ফলাফল রাজ্যে কোথাও হয়নি। এর আগেও এমনটা দেখা যায়নি। একটা বিদ্যালয় থেকে কী ভাবে এক থেকে দশের মেধাতালিকায় ২২ জন কৃতী থাকতে পারে? এদের মাধ্যমিক থেকে বিভিন্ন স্তরের ফলাফল বিশ্লেষণ করলেও তাই কি ধরা পড়বে? হোম সেন্টারে পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি নিয়ে গন্ডগোল হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সংসদ দ্রুত এই ভিল সংশোধন করুক।
যদিও বিজেপি নেতার এই পাগলামি কাণ্ডে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকাবাসীর পাশাপাশি জলচক নটেশ্বরী নেতাজি বিদ্যায়তনের পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যেও। এই ঘটনায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুণ কুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘এটা চূড়ান্ত দুর্ভাগ্যজনক। কোথায় ছেলেমেয়েগুলোকে অভিনন্দন দেবে, তাঁদের আগামী দিনে আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে তা না করে ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এইরকম অনেক স্কুল উঠে আসে যাদের অনেক পড়ুয়াই মেধা তালিকায় উঠে আসে। রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত স্কুলগুলি বা বিভিন্ন জেলার স্কুলগুলির ক্ষেত্রে এই রকম ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। সে সব না জেনে, শুধুমাত্র কদরয রাজনীতি করার লক্ষ্য নিয়ে কেউ যদি ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি এটা চূড়ান্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিজেপি এখন স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়েও রাজনীতি করা শুরু করে দিল। আর কত নীচে নামবে দলটা। এবারের ছাত্র ছাত্রীরা খুব ভালো মেধার ছিল। এতজন একসঙ্গে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ায় আমরা রীতিমত গর্বিত। মূলত অনলাইনে গ্রুপ স্টাডি করায় এবার পড়ুয়াদের অনেক সুবিধা হয়েছে। অনেক কিছু আলোচনা করে ভালো ফল করা সম্ভব।’