কৌশিক দে সরকার: এক সময়কার বামদুর্গ। পরে তা গিয়েছিল তৃণমূলের(TMC) হাতে। জোড়াফুলকে ধাক্কা দিয়ে সেই দুর্গ আবার দখল করে পদ্মশিবির। পর পর দুটি নির্বাচনে তাঁরা বাজিমাত করেছে সেই জেলায়। প্রথমে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এবং পরে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। দুটি নির্বাচনেই জেলায় জয়জয়কার হয়েছে পদ্মশিবিরের। কিন্তু সেই ছবিতেই এবার যেন বদলের ইঙ্গিত মিলছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Abhishek Banerjee) ঘিরে জনস্রোত বয়ে চলেছে কোচবিহারের(Coachbehar) মাটিতে। কেন? ভাবাচ্ছে বিজেপিকে(BJP)। একই সঙ্গে প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের(Nishith Pramanik) নেতৃত্বও।
আরও পড়ুন নবান্ন থেকেই ১১০০ কোটি টাকার পরিকাঠামো উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী
অভিষেককে ঘিরে কোচবিহারের মাটিতে কেন জনস্রোত? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারছেন না বিজেপির নেতারা। তাঁরা শুধু কটাক্ষ ছুঁড়ে দিচ্ছেন। ‘পয়সা দিয়ে লোক ভাড়া করে আনা হয়েছে, ওদের দিয়েই ভিড় তৈরি করা হচ্ছে।’ জেলাবাসী এই দাবি মানতে চাইছেন না। ছবিও সেই দাবিকে মান্যতা দিচ্ছে না। ছবি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে অভিষেককে ঘিরে যে ভিড় তা স্বতঃস্ফূর্ত ভিড়। টেনে এনে, ভয় দেখিয়ে, গায়ের জোরে তৈরি করা ভিড় নয়। তাই মুখে যতই কটাক্ষ বাণ ছুঁড়ুন না কেন বিজেপির নেতারা আসলে তলে তলে উদ্বেগের স্রোত বইছে। কপালে ভাঁজ পড়ছে। আসলে ছবিটা এখন বদলায়নি। বদলের শুরুটা হয়েছিল একুশের বিধানসভা নির্বাচন থেকেই। কেন বদল ঘটছে ছবিতে? কোচবিহার জেলায় যারা বসবাস করেন তাঁদের একটা বড় অংশই রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ। আর আছেন সাধারন বাঙালি ও সংখ্যালঘু সমাজের মানুষেরা। একুশের ভোটে শীতলকুচিতে ৫জন নিরীহ নির্দোষ সংখ্যালঘু ভোটারকে গুলি করে মেরেছিল অমিত শাহের কেন্দ্রীয় বাহিনী। তা ভালভাবে নেননি জেলাবাসী।
আরও পড়ুন কোচবিহারে জনজোয়ারে ভাসলেন অভিষেক, দিলেন বার্তাও
পরে নিশীথ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ছবিটা বদলায়নি। বরঞ্চ নিশীথ মন্ত্রী হওয়ার পরে কোচবিহার জেলায় বিএসএফের(BSF) গুলিতে এমন অনেকেই মারা গিয়েছেন যারা সংখ্যালঘু নন, হিন্দু। একই সঙ্গে রাজবংশী। নিশীথ একদিনের জন্যও ওই সব মানুষদের পরিবারের পাশে দাঁড়াননি। বিএসএফের গুলি চালানোর বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেননি। কেন গুলি করে মারা হয়েছে তা নিয়ে একটিও প্রশ্ন তোলেননি। তাঁর এই নীরবতা জেলাবাসী বিশেষ করে রাজবংশীরা ভাল ভাবে নেননি। কার্যত জেলাজুড়ে আমজনতা এখন মনে করছেন, নিশীথকে সামনে রেখে অমিত শাহ(Amit Shah) আদতে কোচবিহারের বুকে বিএসফের মাধ্যমে বন্দুকের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছেন। আর সেই প্রচেষ্টাই এবার রুখে দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন কোচবিহারের মানুষ। জনস্রোত তাই ধেয়ে চলেছে অভিষেক পানে। বিজেপি উনিশ ও একুশের ভোটে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের ভোট পেয়েছিল অনেক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু সেই সব শুধু প্রতিশ্রুতি হয়েই রয়ে গিয়েছে। কোনওদিন বাস্তবের রূপ পায়নি। সেখানেও জমি হারাচ্ছে বিজেপি।