নিজস্ব প্রতিনিধি: অধিকাংশ দিনই তিনি স্কুলে যান না। কিন্তু প্রতি মাসে নিজের বেতন তুলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ নেই তাঁর। এহেন শিক্ষিকাকে ঘিরে বিতর্ক বাঁধা স্বাভাবিকই। সেই বিতর্ক বাড়তি মাত্র দিয়েছে ওই শিক্ষিকা রাজ্যের শাসকদলের নেত্রী ও নিজ জেলার জেলা পরিষদের সদস্যা হওয়ায়। অভিযোগ উঠেছে হুগলি(Hooghly) জেলা পরিষদের সদস্যা সাহিনা সুলতানার(Sahina Sultana) বিরুদ্ধে। তিনি খানাকুল(Khanakul) এলাকার নির্বাচিত তৃণমূল(TMC) জেলা পরিষদের সদস্য। একই সঙ্গে তিনি খানাকুলের রাজহাটি বন্দর হাইস্কুলের(Rajhati Bandar High School) শিক্ষিকা। তাঁর বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন এলাকাবাসী, সরব হয়েছেন খানাকুলের বিজেপি(BJP) বিধায়ক সুশান্ত ঘোষও(Sushanta Ghosh)।
ঠিক কী অভিযোগ সাহিনার বিরুদ্ধে? রাজহাটি বন্দর হাইস্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের দাবি, স্কুলে নিয়মিত না গিয়েও সাহিনা প্রতি মাসেই বেতন তুলছেন। এই একই অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির বিধায়কও। আর সেই অভিযোগ যে খুব একটা ভুল নয় সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে পরিচালন কমিটি। শিক্ষা দফতর ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও এই বিষয়ে কোনও সমাধান হয়নি বলেও অভিযোগ। এমনকি এমন অভিযোগও আছে সাহিনা স্কুলে গেলেও ক্লাস নেন না। এই বিষয়ে রাজহাটি বন্দর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নব্যেন্দু সামন্ত জানিয়েছেন, ‘স্কুলে যোগ দেওয়ার পর মাঝে বিক্ষিপ্ত ভাবে সাহিনা কয়েকবার স্কুল এলেও গত এক বছর ধরে সমস্যাটা চলছে। আমাদের স্কুল পরিচালন কমিটির তরফে এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টি নিয়ে তাঁকে একাধিকবার প্রশ্ন করেছি। কিন্তু, এই বিষয়ে কোনও গুরুত্ব দেননি তিনি। এনিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে। আমরা শিক্ষা দফতর ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’ এই বিষয়ে একই মত প্রকাশ করেছেন স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঘটনার জেরে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এবার কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। শুরু হয়েছে সাহিনার বিরুদ্ধে তদন্তও। এই বিষয়ে খানাকুল-২ ব্লকের বিডিও শঙ্খ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের সাধারণ সদস্যের ক্ষেত্রে তাঁর জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব এবং চাকরিস্থলে তাঁর ভূমিকা কী ছিল তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা দফতর।’ যদিও সাহিনার দাবি, সংখ্যালঘু সমাজের মেয়ে হওয়ায় বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্রে সামিল হয়েছেন এলাকার কিছু বিজেপি সমর্থক পরিবার ও স্কুলের একাংশ। তাঁর দাবি, ‘জুনের ২৭ তারিখ স্কুল খুলেছিল। তারপর কয়েক দিন গিয়েছিলাম। তারপর আর যাইনি। প্রধান শিক্ষককে বলেছিলাম, আমি যে ছুটি পাই তা লিখে দেবেন। মহিলা হিসেবে সিসিএল লিভ আছে। তারপরেও বিজেপি বিধায়ক আমার নামে লোককে খেপিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষকও উল্টোপাল্টা কথা বলছেন। আমিও ব্লক প্রশাসনের কাছে তদন্ত চেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযগ তোলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।’