নিজস্ব প্রতিনিধি: বীরভূম জেলার রামপুরহাট থানার বকটুই গ্রামের হিংসাত্মক ঘটনার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার থেকেই সরব হয়েছে বিজেপি(BJP)। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যেমন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে তেমনি, শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনও ওই ঘটনায় রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। কার্যত বকটুই গ্রামের ঘটনা নিয়ে রাজ্যের শাসক দলকে চেপে ধরতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে বিজেপি। কিন্তু তাঁদের এই উদ্বেগ, চিন্তা আর সরবতার পিছনে থাকা আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল ছোট এক ঘটনায়। বিজেপি যে বকটুই নিয়ে কদর্য রাজনীতি আর মিথ্যা সহানুভূতি দেখানো ছাড়া আর কিছুই করছে না সেটাই সামনে নিয়ে এল এক ভাইরাল হওয়া ভিডিও।
বুধবার সকালে বিজেপির বিধায়কেরা(MLA) কলকাতা থেকে ৪টি বাসে করে রওয়ানা দেন বকটুই গ্রামের পথে। শক্তিগড়(Shaktigarh), সিউড়ি, রামপুরহাট হয়েই সেই কনভয় যাওয়ার কথা বকটুই গ্রামে। সিউড়ি থেকে সেই কনভয়ে যোগ দেওয়ার কথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। কিন্তু শুভেন্দু যোগ দেওয়ার আগেই শক্তিগড়ে জাতীয় সড়কের ধারে ল্যাংচার(Langcha) দোকানের সামনে বাস থামিয়ে বিজেপি বিধায়কদের বেশ পিকনিকের মেজাজে ল্যাংচা, সীতাভোগ, মিহিদানা খেতে দেখা যায়। সেই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হতে বেশি সময় নেয়নি। কার্যত ওই ভিডিও সামনে আসার পরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে যে বিজেপি বিধায়কেরা কী আদৌ বকটুই গ্রামের ঘটনা নিয়ে সামান্যতম দুঃখিত? নাকি তাঁরা গোটা ঘটনাকে বেশ উপভোগ করছেন আর তা নিয়ে কদর্য রাজনীতি করছেন।
ওই ঘটনা নিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন তীব্র কটাক্ষ হেনেছেন তেমনি টুইট করে ক্টাক্ষ হেনেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও(Kunal Ghosh)। এদিন কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বকটুই ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়েই বিজেপি নাম না করেই শক্তিগড়ের ল্যাংচা নিয়ে কটাক্ষ হানেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি আজই যেতাম রামপুরহাটে। কিন্তু কিছু দল ল্যাংচা খেতে খেতে ঢুকছে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে। তাই আজ রামপুরহাট যাব ভেবেও গেলাম না।’ অন্যদিকে কুণাল টুইট করে কটাক্ষ হেনে বলেছেন, ‘বিজেপির পিকনিক ২। গাড়ি, বাসে যথাযথ আয়োজন বলে খবর। তবে শক্তিগড়ের ল্যাংচা না হলে চলে? উল্লেখ্য, ওঁরা রামপুরহাটের দুঃখজনক ঘটনাস্থল দেখতে যাচ্ছেন।’
তবে বিধানসভায় বিজেপি-র মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘পাগলের কথার কোনও উত্তর দেব না। ওঁকে(কুণাল ঘোষ) এই জন্যই তৃণমূল রেখেছে। আমরা বকটুই যাচ্ছি। পথে যোগ দেবেন শুভেন্দু অধিকারী। আমাদের যদি আটকানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেখানেই বসে বিক্ষোভ শুরু করব।’ বিজেপি-র একাংশের বক্তব্য, এসব বলে ‘গণহত্যা’-র বিষয়টি থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে তৃণমূল। দলের এক নেতার কথায়, ‘দীর্ঘ সফরে তৃণমূলের কোনও নেতানেত্রী কি বিভিন্ন প্রয়োজনে গাড়ি দাঁড় করান না? কোনওদিন করাননি? তার মানেই কি তাঁরা বিষয়টি লঘু করে দেখেছিলেন?’ তবে যে যাই বলুক বাংলার জনতা কিন্তু বিজেপি বিধায়কদের এই মানসিকতাকে সমর্থন জানাতে পারছেন না। তাঁদের দাবি বিজেপি যেটা করছে সেটা কার্যত ‘কুমিরের কান্না’ ও ‘ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা’।