নিজস্ব প্রতিনিধি: অনুমান সত্যি করে কলকাতা হাইকোর্ট অভিমুখেই দৌড় দিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। লক্ষ্য যেনতেন ভাবে কলকাতা পুরনিগমের ভোট ঠেকিয়ে দেওয়া, ঠিক যেভাবে পদ্মপাল তথা বাংলার ছোটলাট রাজভবননিবাসী হাওড়া পুরনিগমের ভোট আটকে দিয়েছেন। সেই পদ্ধতিতেই এখন কলকাতার ভোট ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে বঙ্গ বিজেপি। ঠিক এক বছর আগেই কিন্তু ছিল সম্পূর্ণ অন্য ছবি। তখন হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট দৌড়ে বেড়িয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। ঠুকেছিল একের পর এক মামলা যাতে কোভিড আবহেও পুরভোট করানো যায়। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মহা হারের পরে এখন তাঁরাই উঠে পড়ে লেগেছে পুরভোট ঠেকিয়ে দিতে। কেননা তাঁদের অবস্থা এখন বিধ্বস্তেরও অধম দশা। এই অবস্থায় কলকাতায় পুরনির্বাচন হলে তাঁরা না পারবে সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে না পারবে জয়ের মুখ দেখতে। নিজেদের সেই দুরাবস্থা যাতে ঠেকানো যায় তার জন্য এখন তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন যাতে পুরভোট ঠেকানো যায়।
এদিন সকালেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানেই বলা হয়েছে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পুরনির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে। ভোটের জন্য এদিন থেকেই মনোনয়ন দাখিলের কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ১ ডিসেম্বর। অর্থাৎ বিজেপির হাতে মাত্র ৭দিন সময় থাকছে। এই সময়ের মধ্যেই কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী খুঁজে তাঁদের মনোনয়ন দাখিলের কাজ সেরে ফেলতে হবে। এত কম সময়ের মধ্যে এই কাজ সেরে ফেলা যে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের পক্ষে সম্ভব নয় সেটা বুঝেই এখন হাইকোর্টে দৌড় দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা তাঁরা চাইছেন তাঁরা আগেই পুরনির্বাচন নিয়ে যে মামলা ঠুকেছেন তা এদিনের মধ্যেই যেন নিষ্পত্তি করা হয়। মাননীয় প্রধান বিচারপতি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে এদিন দুপুর ১টার সময় সময় দিয়েছেন। সেখানেই তিনি বঙ্গ বিজেপির বক্তব্য শুনবেন ও ওই মামলা নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। তবে ঘটনা হচ্ছে এটাই, একবার নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়ে গেলে তা প্রত্যাহার করা যায় না। তাই হাইকোর্টে কার্যত ধর্না দিয়েও বিজেপি আদৌ কিছু সুবিধা করতে পারবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
তবে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, কলকাতা পুরনিগমের নির্ঘন্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে কোথাও আইনলঙ্ঘণের ঘটনা ঘটেনি। তাই আদালতের পক্ষেও এখানে স্বাধীন নির্বাচনী সাংবিধানিক সংস্থা হিসাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করাও কার্যত অসম্ভব। তাই বিজেপি যাই করুক না কেন এখন আর তাঁদের পক্ষে কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচন ঠেকানো সম্ভব নয়। তাঁরা হাইকোর্টে পুরনির্বাচন নিয়ে যে মামলা ঠুকেছে সেখানে কোথাও পুরনির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়ার আর্জি জানানো হয়নি। তাঁদের দাবি ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ১ দিনেই সব পুরসভার নির্বাচন করাতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে। তাই গতকাল ওই মামলার শুনানিতে আদালতও কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। সেই সঙ্গে মামলার শুনানির দিনক্ষণও পিছিয়ে দেয় আদালত। আর যেহেতু কোনও স্থগিতাদেশ জারি হয়নি তাই এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনও কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে। তাই বিজেপির পছন্দ হোক বা না হোক এখন তাঁদের আঙুল কামড়ানো আর দেওয়ালে মাথা ঠোকা ভিন্ন কিছুই করার নেই।
আসল কথা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে গোহারা হারের পরে বিজেপি সাংগঠনিক অবস্থা এখন বালির বাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুলনায় সংগঠন কিছুটা হলেও মজবুত রয়েছে বামেদের। তাই তাঁরা এই নির্বাচনী ঘোষণা নিয়ে কোনও বিরোধীতা করেনি। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্ব খুব ভালই জানেন তাঁদের সংগঠনে এখন রাহুর দশা চলছে। ৭ দিনের মধ্যে তাঁরা কোনও ভাবেই কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী খুঁজে দাঁড় করাতে পারবেন না। তাই নিজেদের মুখরক্ষা করতে এখন তাঁরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির শরণাপন্ন হয়েছেন। যদি ভোট ঠেকানো যায়, এই লক্ষ্য নিয়ে।