নিজস্ব প্রতিনিধি: ভিলেন শুধুই ছেলেরা(Men), মেয়েরা ধোয়া তুলসিপাতা। অপরাধী শুধুই ছেলেরা, মেয়েরা(Women) ভাজা মাছটা উল্টে খেতেও জানে না। ধর্ষকেরা শুধুই পুরুষ, মেয়েরা তো মিথ্যা কথা বলে না। এই ধারনাতেই বড় ধাক্কা দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court)। আর সেটাও আন্তর্জাতিক নারী দিবসের(International Womens Day) মুখে। দাম্পত্য সম্পর্কে মানসিক অত্যাচারের সংজ্ঞা নির্ধারণে বিভিন্ন সময় একাধিক রায় দিয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালত। এবার তাতে যুক্ত হল নয়া মাত্রা। সম্প্রতি বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি মামলার(Divorce Case) রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, অসুস্থ বাবা-মাকে ছেড়ে স্বামীকে অন্যত্র থাকতে বলা মানসিক অত্যাচারের শামিল। শুধু তাই-ই নয়, এমন কার্যকলাপ আইনত বিচ্ছেদের কারণও। অতএব মেয়েরা সাবধান হও। তোমরাও কিন্তু এবার আদালতের র্যাডারে চলে আসছো। মেয়ে বলেই আর সব কিছু থেকে ছাড়া পাবে না।
আরও পড়ুন অভিষেকের ডায়মন্ডে ২৭ কোটির প্রতারণা, গ্রেফতার মা-পোলা
২০ বছর আগে দমদমের এক মহিলার সঙ্গে বিয়ে হয় বারাসত এলাকার এক পুরুষের। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ওই ব্যক্তির বাড়ির লোকজনদের মেনে নিতে পারছিলেন না ওই মহিলা। বিশেষত শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কোনওরকম বনিবনা হচ্ছিল না তাঁর। এসব কারণে নিত্য ঝামেলা লেগে থাকত। এরপর থেকেই স্বামীকে তিনি চাপ দিতে শুরু করেন অসুস্থ মা-বাবাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওই ব্যক্তি তাতে কর্ণপাত করেননি। তার জেরে বারবার তাঁকে চাপ দিতে থাকেন ওই মহিলা। কিন্তু স্ত্রীর এই প্রস্তাব কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি ওই ব্যক্তি। এর মাঝে ২০০৭ সালে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। তারপর পরিস্থিতি আরও জটিল হতে শুরু করে। স্বামীর অসুস্থ বাবা-মায়ের সঙ্গে দুর্বব্যহার আরও বাড়িয়ে দেন ওই মহিলা। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই তুমুল ঝামেলার পর মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান ওই মহিলা। অনেক করে বলার পরও ফেরত আসতে রাজি হননি তিনি। অন্তত ওই ব্যক্তির বোন অর্থাৎ মহিলার ননদের তেমনটাই দাবি আদালতে।
আরও পড়ুন মমতার বাংলায় কৃষিজাত পণ্যের ওপর নয় কোনও Income Tax
এর পরেই ওই ব্যক্তি দাম্পত্য অধিকারের দাবিতে বারাসত আদালতে মামলা করেন। সেই মামলায় জেলা জন অভিযোগ নিরসন কেন্দ্র ওই মহিলাকে ফের দাম্পত্য সম্পর্ক শুরুর পক্ষে মত দেয় এবং মেয়েকে নিয়ে শ্বশুড়বাড়ি ফেরত যেতে বলে। কিন্তু সেই মহিলা ওই রায় মেনে নেননি। উল্টে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা আইনে মামলা ঠুকে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, স্বামীর কাছে খোরপোশ দাবি করেও মামলা ঠোকেন তিনি। যার ফলে মহিলার স্বামীর দায়ের করা দাম্পত্য অধিকার সংক্রান্ত মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। তখন তিনি মানসিক অত্যাচার ও পরিত্যাগের অভিযোগে বারাসত আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানির পর সেই মামলায় ওই ব্যক্তির পক্ষে রায় দেয় আদালত।
আরও পড়ুন চাকরির সুপারিশ পাঠিয়ে ED-CBI‘র নজরে ১০০ জনপ্রতিনিধি
নিম্ন আদালতের ওই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা মানসিক অত্যাচারের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। কিন্তু উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ‘অসুস্থ বাবা-মাকে ছেড়ে স্বামীকে অন্যত্র থাকতে বলা মানসিক অত্যাচার। তাই ওই মহিলার আবেদন খারিজ করা হচ্ছে। কথা দিয়েও ফের দাম্পত্য সম্পর্ক শুরু না করার কোনও যুক্তি ওই মহিলার কাছে নেই। সঙ্গত কারণেই বিবাহ বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিয়েছে নিম্ন আদালত।’ ইদানিং কালে নানান মহল থেকে অভিযোগ উঠছে যে বিয়েকে একশ্রেনীর মহিলা কার্যত ব্যবসায় পরিণত করে দিয়েছেন। তাঁরা বিয়ে করছেন কার্যত ডিভোর্স করে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ ও খোরপোষ আদায়ের জন্য। আর তাতে চূড়ান্ত ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন পুরুষেরা। কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় সেই ঘটনা ঠেকাতে কিছুটা হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।