নিজস্ব প্রতিনিধি: বিশ্বকবির নিজ আঙিনায় তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পৌষ মেলার(Poush Mela) আয়োজন কার্যত বন্ধই করে দিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়(Viswabharati University) কর্তৃপক্ষ। আর সেই মনোভাবের জন্য বিশ্বভারতীর পড়ুয়া থেকে শান্তিনিকেতনের আশ্রনিকেরা, বোলপুরের ব্যবসায়ী থেকে বাসিন্দা, বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী থেকে রবীন্দ্রানুরাগীরা, সকলেই একযোগে কাঠগড়ায় তোলেন বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে। সকলের একদাবি, গেরুয়া শিবিরের এজেন্ডা কার্যকর করার লক্ষ্যেই বিশ্বভারতীর নিজস্ব ঐতিহ্যকে কার্যত ধ্বংস করতে চাইছেন তিনি। চলতি বছরে বোলপুরের বুকে বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গণে পৌষ মেলার আয়োজন করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় শান্তিনিকেতন শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের(SSDA) তরফে কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার শুনানিতেই আগামী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে হলফনামা জমা দিতে এদিন নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ। কেননা বিশ্বভারতীর তরফে জানানো হয়েছিল পৌষ মেলার জন্য মাঠ তাঁরা দেবেন না। সেই না দেওয়ার কারণটাই হলফনামা আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন ‘আমি দিতে চাই, না পেলে আমার খুব গায়ে জ্বালা করে’ ক্ষুব্ধ মমতা
চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের উদ্যোগে বিশ্বভারতীর পরিচালনায় শান্তিনিকেতন পূর্বপল্লির মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে পৌষ মেলা। ৭ পৌষ থেকে ১০ পৌষ চার দিন মেলা হয় পূর্বপল্লির মাঠে। যদিও ভাঙা মেলা চলে আরও ১ মাস ধরে। কিন্তু এই ছবিটারই পরিবর্তন ঘটতে থাকে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর উপাচার্য হয়ে আসার পরে। প্রথমে পরিবেশ আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে মেলা প্রাঙ্গণ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া এবং পরে কোভিডের দোহাই দিয়ে পৌষ মেলার আয়োজন বন্ধ করে দেন তিনি। এবারেও বোলপুরের ব্যবসায়ীদের তরফে প্রথমে বিশ্বভারতীকে মেলা আয়োজন করার কথা বলা হয়েছিল। রাজ্য সরকারার তরফেও সাহায্যের বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মেলার আয়োজন নিয়ে কোনও বৈঠকই ডাকেননি উপাচার্য। এমনকি কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসন মেলার আয়োজন নিয়ে বৈঠক ডাকলেও তাতে হাজির হননি উপাচার্য। শেষে বাধ্য হয়েই কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের তরফে মামলা করে শান্তিনিকেতন শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্যদ। সেই মামলারই শুনানি ছিল এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার।
আরও পড়ুন ভোটার কার্ডে আধার লিঙ্ক বাধ্যতামূলক নয়, হিঙ্গলগঞ্জে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
এদিন শুনানিকালে বিশ্বভারতীর তরফে তাঁদের আইনজীবী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পূর্ববল্লীর মাঠ দেবে না মেলার আয়োজনের জন্য। কেননা জাতীয় পরিবেশ আদালত ওই মাঠে মেলার আয়োজনের জন্য যে সব শর্ত দিয়েছে সেই সব শর্ত মেলায় আসা হকার থেকে ব্যবসায়ীরা মেনে চলেন না। এমনকি প্রশাসনও সেই সব ক্ষেত্রে সহায়তা করে না। কিন্তু মেলা শেষ হলেই শর্ত ভাঙার জেরে পরিবেশ আদালতে বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ও তার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়কে মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা দিতে হয়। অথচ এই মেলা থেকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টাকাও রোজগার হয় না। তাই মেলার জন্য মাঠ দেবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তখনই প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, বিশ্বভারতী কেন মেলার আয়োজন করবে না আর কেনই বা মাঠ দেবে না সেটা জানিয়ে আদালতে হলফনামা জমা দিক ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে।
আরও পড়ুন সুন্দরবন পৃথক জেলা হবেই, আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর
এদিনের শুনানিকালে শান্তিনিকেতন শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের তরফে আদালতকে জানানো হয়, গত বছর বিশ্বভারতী পৌষ মেলা না করায় বাংলা সংস্কৃত মঞ্চ ও বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা নিয়ে বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে পৌষমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর এবারও শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা হওয়া নিয়ে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মুখে। মেলার সঙ্গে জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও তার অগ্রগতি জড়িয়ে রয়েছে। মেলা আয়োজিত না হলে ওই দুই ক্ষেত্রেই ধাক্কা লাগবে। প্রয়োজনে আদালত সব দেখে শুনে রায় দিক। কীভাবে মেলার আয়োজন করা যায় সেই রাস্তা দেখাক আদালত। এরপরেই বিচারপতি জানিয়ে দেন বিশ্বভারতীর হলফনামা দেখে তবেই তিনি এই বিষয়ে রায় দেবেন। তবে বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে মেলা কোনও ভাবেই আয়োজন করা হবে না। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাবে বিশ্বভারতী। জানানো হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi)কেও। কেননা তিনি পদাধিকারবলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। এক্ষেত্রে তাঁর অভিমতও নেওয়া হবে। আবার নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতী আদালতের নির্দেশ না মানলে বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের তরফে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে।