নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) মেধাবী পড়ুয়ারা যাতে অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষার থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) চালু করেন স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড(Student Credit Card)। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার মেধাবী পড়ুয়ারা মাত্র ৪ শতাংশ হারে সুদের বিনিময়ে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ(Loan) পেতে সক্ষম দেশের যে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক(Nationalized Bank) থেকে। সেই ঋণ পরবর্তী ১৫ বছর ধরে শোধ করা যায়। ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত এই ঋণের জন্য আবেদন করা যায়। বাংলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৩ হাজার ছাত্রছাত্রী এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ পেয়েছে, যার মূল্য আনুমানিক ১২৫০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে রাজ্য সরকারই গ্যারান্টার। তাই এই প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হলেও তা খরচার খাতায় চলে যাবে না। কিন্তু তারপরেও দেখা যাচ্ছে যথাযথ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মেধাবী পড়ুয়াদের সেই ঋণ দিচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলি। এর জেরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এক পড়ুয়া। সেই পড়ুয়ার আবেদন খতিয়ে দেখে এবার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বড়সড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court)।
ঠিক কী হয়েছে? রাজ্যের শিক্ষাদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে রাজ্য সরকার ঋণের গ্যারেন্টার। তাই কোনও পড়ুয়া ঋণ নিয়ে তা শোধ করতে না পারলে রাজ্য সরকারই সেই ঋণ সুদ সহ মিটিয়ে দেবে। তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলি সেই ঋণ দিতে চাইছে না পড়ুয়াদের। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ পেতে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বাংলার মেধাবী পড়ুয়াদের। সামান্য ভুলচুক হলেই আবেদন নাকচ করছে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। সেই সূত্রেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সুদেষ্ণা বণিক নামে এক ছাত্রী। সে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে পলিটিক্স অব ডেভেলপমেন্টের পড়ুয়া। ১ বছরের কোর্স ফি বাবদ তাঁকে মেটাতে হত ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ২৮ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে ফি বাবদ সুদেষ্ণা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দিলেও বাকি টাকা নিয়ে সে সঙ্কটে পড়ে যায়। কেননা ওই টাকা না মেটানোর জন্য সে ক্লাস করতে পারছিল না। সেই সূত্রেই সে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করে। কিন্তু যেহেতু তাঁর বাবার নামে একাধিক ব্যাঙ্ক ঋণ আগে থেকেই রয়েছে সেহেতু সুদেষ্ণার আবেদন নাকচ করে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক। তারপরেই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সুদেষ্ণা।
সুদেষ্ণার আবেদন খতিয়ে দেখে এবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পে রাজ্য সরকার গ্যারান্টার হওয়া সত্ত্বেও একাধিক পড়ুয়াকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের ঋণ থেকে বঞ্চিত করছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। ফলে এই প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হচ্ছে। তাই প্রকল্পের যথাযথ রূপায়ণের জন্য অবিলম্বে রাজ্যে এবং প্রতিটি জেলায় একটি করে মনিটরিং কমিটি গড়তে হবে। পড়ুয়াদের ঋণ পাওয়ার সমস্যা জেনে নিয়ে এই কমিটি সমাধানের ব্যবস্থা করবে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে দু’সপ্তাহের মধ্যে ঋণদানের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে বলে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ২০২১ সালের ৩০ জুনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এই ঋণের যাবতীয় দায়ভার রাজ্যের। তারাই লোনের গ্যারান্টার। তাই ঋণ পাওয়া থেকে ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হলে শিক্ষাদফতরকেই তার দায় নিতে হবে। শিক্ষাদফতরকে অবিলম্বে রাজ্যে এবং জেলাগুলিতে নজরদারি কমিটি গড়ে পদক্ষেপ করতে হবে।
যদিও যে মামলার সূত্র ধরে কলকাতা হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ ও রায় সেই সুদেষ্ণা বণিককে ঋণদানের জন্য সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে সংশ্লীষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের এজলাসে সেই মামলার শুনানি শেষ হলেও তার রায়দান স্থগিত রেখেছেন মাননীয় প্রধান বিচারপতি। আগামী দিনে তিনি এই মামলায় কী রায় দেন তার ওপর বাংলার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে।