নিজস্ব প্রতিনিধি: চাকরি গেল রাজ্যের শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর(Paresh Chandra Adhikari) মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর(Ankita Adhikari)। সেই সঙ্গে ফেরত দিতে হবে যাবতীয় বেতন। কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court) এমনই নির্দেশ দিল। অঙ্কিতাকে কার্যত চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত যে বেতন তিনি পেয়েছেন তা ২টি কিস্তিতে ফেরত দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যদিও এখনও জানা যায়নি পরেশকন্যা এখন ঠিক কোথায় আছেন। যদিও এদিন হাইকোর্টে তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তিনি কোচবিহারে আছেন।
পরেশকন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল বাবার প্রভাব খাটিয়ে তিনি শিক্ষিকার পদে সরকারি চাকরি পেয়েছেন। সেই চাকরি তাঁকে দিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি(SSC)। মেখলিগঞ্জের ইন্দিরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের(Indira Girls High School) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা পদে সেই চাকরি দেওয়া হয়েছিল পরেশকন্যাকে। কিন্তু সেই চাকরি পাওয়ার মতো যোগ্যতা ছিল না অঙ্কিতার। তাঁর প্রাপ্য নম্বর যেমন অনান্য প্রার্থীদের থেকে কম ছিল তেমনি তিনি পার্সোন্যালিটি টেস্টে হাজিরও হননি। আর তার জেরেই মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলায় ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এমনকি পরেশচন্দ্র অধিকারীকে হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল কলকাতার নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের কার্যালয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখিও হতে হয়েছে। এদিনও তাঁকে আবারও সিবিআই ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মূল লক্ষ্য এটাই গোটা ঘটনায় পরেশের ভূমিকা কী ও কার নির্দেশে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় কারা কারাই বা জড়িত ছিল। যদিও অঙ্কিতাকে এখনও জেরা করেনি সিবিআই। তাঁকে জেরা করা হবে কিনা তাও জানা যায়নি।
অঙ্কিতার চাকরি পাওয়া নিয়ে মামলা দায়ের করে ববিতা সরকার নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। ২০১৭ সালের নভেম্বরে এসএসসি পরীক্ষার দ্বিতীয় মেধাতালিকায় অঙ্কিতার নাম ওঠে। অভিযোগ, প্রথম মেধাতালিকায় প্রথম ২০তে নাম না থাকা অঙ্কিতাকে দ্বিতীয় তালিকার একেবারে প্রথমে নিয়ে আসা হয় অবৈধ ভাবে। ওই মেধাতালিকার ২০ নম্বরে যে এসএসসি পরীক্ষার্থীর নাম ছিল তাঁর থেকেও ১৬ নম্বর কম পেয়েছিলেন অঙ্কিতা। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬১। যেখানে ২০ নম্বরে থাকা পরীক্ষার্থী ববিতার নম্বর ছিল ৭৭। অঙ্কিতার নাম মেধাতালিকায় ঢোকানোয় ববিতা চাকরির সুযোগ হারান। সম্প্রতি ঘটনাটির কথা আদালতকে জানিয়েছিলেন এসএসসির সদ্য ইস্তফা দেওয়া চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। এর পরেই অঙ্কিতার বাবা রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হতে বলে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন যখন পরেশকে আবারও সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করছে তখনই কলকাতা হাইকোর্ট অঙ্কিতার চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়ে দিল।
এদিনের নির্দেশে আদালত জানিয়েছে, অবৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার জন্য অঙ্কিতা অধিকারীকে কোচবিহার জেলার ইন্দিরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিগত ৪১ মাসের বেতন দুই কিস্তিতে ফেরত দিতে হবে অঙ্কিতাকে। প্রথম কিস্তি দিতে হবে ৭ জুন। দ্বিতীয় কিস্তির তারিখ ৭ জুলাই। ওই টাকা জমা দিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে। এদিনের পর থেকে অঙ্কিতা আর নিজেকে কোথাও শিক্ষিকা বলে পরিচয়ও দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন এই চাঞ্চল্যকর রায় দিয়েছেন। বাম জমানায় কোনও মন্ত্রীর পরিবারের কোনও সদস্যের এভাবে সরকারি চাকরি যায়নি। তবে পরিবর্তনের সরকারের আমলে এটাই প্রথম ঘটনা।
