নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশজোড়া এই সঙ্ঘের নাম। সবাই একডাকে চেনে। শ্রদ্ধায় মাথা অবনত করে। চোখ বুজে বিশ্বাসও করেও। অথচ সেই সঙ্ঘের গায়েই কিনা লেগে গেল গরু পাচারের(Cattle Smuggling) কালি। বিস্মিত খোদ সিবিআই(CBI) কর্তারা। চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে তাঁদের কাছে। বীরভূম(Birbhum) জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol) এখন জেলবন্দী। কিন্তু তাঁর বাড়ি থেকে শুরু করে চালকল মায় ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে যে বিপুল পরিমাণ জমি ও সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছেন সিবিআই আধিকারিকেরা তার মধ্যেই রয়েছে বোলপুরের(Bolpur) পাশেই থাকা মুলুক(Muluk) গ্রামের কাছে থাকা দেড় বিঘা জমিও। সেই জমি আদতে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে(Bharat Sevasram Sangha) দান করা হয়েছিল। কিন্তু ওই জমিই ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকায় কিনে নিয়েছে এএনএম অ্যাগ্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড যার অন্যতম ডিরেক্টর হলেন অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডল(Sukanya Mondol)। কীভাবে দান করা জমি হস্তান্তরিত হল আর কেন বাজারদরের থেকে কমে দামে বিক্রি হল তা নিয়েই এখন তদন্ত শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
জানা গিয়েছে, বোলপুর শহরের কান ঘেঁঢে থাকা মুলুক গ্রামে জমির দর কার্যত আকাশছোঁয়া। এই গ্রাম দিয়েই চলে গিয়েছে বোলপুর-পালিতপুর রোড। সেখানেই রয়েছে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সুবিশাল কম্পাউন্ড ও মন্দির। সিবিআইয়ের হাতে আসা একটি জমির দলিল দেখা তাঁরা জানতে পেরেছেন জমি সুচিন্ত্যকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি গ্রামের পুরুষ ও মহিলাদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির জন্য ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে ওই জমি দান করেছিলেন। কিন্তু সেখানে কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রই গড়ে ওঠেনি। অথচ ২০১৮ সালে সেই জমি ভারত সেবাশ্রমের কাছ থেকে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিনে নেয় এএনএম অ্যাগ্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড। ২০২১ সালে সেই জমি রেজিস্ট্রিও হয়ে যায়। সিবিআই কর্তাদের দাবি, যে সময় ওই জমি কেনা হয়েছিল সেই সময়ে ওই জমির দর ছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকা। অথচ তার থেকে অনেকটা কম দামে সেই জমি কিনে নেয় কেষ্ট কন্যার সংস্থা। কেন কম দামে সেই জমি কেনা হয়েছিল, এটাই প্রশ্ন। একই সঙ্গে নথি দেখে তাঁরা জানতে পেরেছেন ওই জমি বিক্রি করার সময়ে তাতে সঙ্ঘের তরফে সই করেছিলেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মুলুক শাখার সভাপতি স্বামী সঙ্ঘমিত্রানন্দ। আর কেষ্ট কন্যার সংস্থার তরফে সই করেছিলেন বিদ্যুৎবরণ গায়েন(Bidyut Boron Gayen), যিনি আদতে অনুব্রতের বাড়ির রাঁধুনী তথা পরবর্তীকালে বোলপুর পুরসভার কর্মী, কেষ্ট কন্যার নামে থাকা একাধিক সংস্থার ডিরেক্টর এবং বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
এখানেই সিবিআই আধিকারিকদের দৃঢ় বিশ্বাস ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অন্দরেও ঢুকেছে গরু পাচারের টাকা। কেননা গরু পাচারের টাকা দিয়েই ওই জমি কেনা হয়েছিল। সঙ্ঘের কেউ সরাসরি এই পাচারে যুক্ত কিনা তা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর আধিকারিকেরা জানতে না পারলেও তাঁদের ভূমিকা এখন তদন্তের মুখে পড়ে গিয়েছে। সিবিআই আধিকারিকেরা এখন মূলত জানতে চাইছেন, এই জমি বিক্রি করতে কোনঅভাবে কী চাপ দেওয়া বা ভয় দেখানো হয়েছিল? দান করা জমি কী আইনত বিক্রি করা যায়? জমি বিক্রির টাকা বাজারদরের থেকে কম কেন? তাহলে কী জমি বিক্রির ক্ষেত্রে নগদ কালো টাকা ব্যবহার হয়েছে যা দলিলে দেখানো হয়নি? আদৌ জমি বিক্রির টাকা সঙ্ঘের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল তো? সঙ্ঘের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কী এই জমি বিক্রির বিষয়ে জানতেন বা জানেন? নাকি সবটাই শুধুমাত্র হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যে সীমাব্দধ ছিল? এইরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সিবিআই কর্তারা।