নিজস্ব প্রতিনিধি: দলেরই একাংশের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh)। কিছুতেই তাঁকে বাগে আনা যাচ্ছে না, চেপে রাখাও যাচ্ছে না। নিত্যদিন নিত্যনতুন পন্থায় তিনি নিজের ক্যারিশ্মা দলের নেতাদের সামনে তো তুলে ধরছেনই, একইসঙ্গে রাজ্য রাজনীতিতেও নিজের প্রাসঙ্গিকতা টিকিয়ে রাখছেন। শুধু তাই নয়, এখন আবার তিনি দলেরই বিক্ষুব্ধ, বসে যাওয়া নেতাদের এক করে রাজ্য নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন দলেরই পুরাতন কার্যালয়ে বিজয়া দশমীর সৌজন্য বৈঠক করে। সেই দিলীপকে টাইট দিতেই এবার তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হল বঙ্গ বিজেপির ঐতিহ্যশালী কার্যালয় মুরলিধর সেন লেনের কনফারেন্স রুমের দরজায়। ক্ষুব্ধ দিলীপ অনুগামীরা আবার তার জেরে চিঠি পাঠালেন দলেরই সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার(J P Nadda) কাছে। সব মিলিয়ে পদ্মের কোলাহল নেল এল রাজপথে।
সম্প্রতি মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য বিজেপির পুরাতন কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমের দরজায় আচমকাই একটি বড় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, প্রবেশ নিষেধ। দলেরই রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পার্টির অফিস সেক্রেটারি প্রণয় রায়ের অনুমতি ছাড়া কেউ তালা খুলতে পারবেন না। বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরে। বিজেপির একাংশের মতে, কনফারেন্স রুমে তালা দেওয়াটা উপলক্ষ মাত্র, আসল লক্ষ্য দিলীপ ঘোষকে তালাবন্দি করা! কারণ, তালা ঝোলার দু’দিন আগেই ওই কনফারেন্স রুমে বিজয়া সম্মিলনী করেছিলেন দিলীপ। সেখানে অংশ নিয়েছিলেন কলকাতা ও আশপাশের জেলার বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা-কর্মীদের অনেকেই। এরপরই তালা লাগানোর সিদ্ধান্তের মধ্যে গভীর যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিমত দিলীপপন্থীদের। তালা ঝোলানোর বিষয়টি হালকাভাবে নিচ্ছেন না দিলীপ নিজেও। ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে তিনি নিজেই রাজ্য বিজেপি দফতরে গিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করবেন।
একই সঙ্গে জানা গিয়েছে, গোটা বিষয়টি নিয়ে বঙ্গ বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার প্রাক্তন সহ-সভাপতি শামসুর রহমান(Samsur Rahaman) এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন নাড্ডাকে। মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিসটি নিয়ে বেশ কিছু মাস ধরেই বিজেপির অন্দরে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের সিদ্ধান্ত, পুরোনো রাজ্য দফতর মেরামত করে সেখানে দলের কলসেন্টার খোলা হবে। আর দলের নেতাদের বসার ব্যবস্থা করা হবে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের পার্টি অফিসে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার প্রথম পদক্ষেপেই ভেঙে ফেলা হয় ওই পার্টি অফিসে দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাহুল সিনহার(Rahul Sinha) ঘর ২টি।
তাতে অবশ্য দমেননি দিলীপ। ফুরসত পেলে তিনি মাঝেমধ্যেই চলে যান মুরলীধরের ওই পার্টি অফিসে। নিজের ঘরটি আর নেই। তাই একতলার কনফারেন্স রুমেই তিনি অনুগামীদের সঙ্গে বৈঠক করতেন। এখন তাঁর অনুগামীদের দাবি, দিলীপের এই নিজের মতো করে সংগঠন সাজিয়ে তোলাটাই নাকি ভাল চোখে দেখছেন না দলের বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব। কিছুতেই দিলীপকে টাইট দিতে না পারে তাই তাঁরা এখন তালা ঝোলাবার পন্থা নিয়েছেন। দলের রাজ্য নেতৃত্বের অনুগামীদের আবার দাবি, মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিসটি এখন আগের মতো সক্রিয় নেই। সল্টলেকের পার্টি অফিস থেকে দল পরিচালনা করা হয় এখন। তাই যাঁরা দলের কাজ করতে চান, তাঁরা সল্টলেকে আসতেই পারেন। মুরলীধর সেন লেনে দুপুরবেলা হাজির হয়ে অযথা আড্ডা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই ঘরটি বন্ধ করা হয়েছে। ওটা ক্লাব ঘর নয়।