নিজস্ব প্রতিনিধি: সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না অধিকারী পরিবারের। সকালে নিজেদের শহর কাঁথিতে প্রচারে বেড়িয়ে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন শুভেন্দু অধিকারী। আর দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে না হতেই এল আদালতের চাঞ্চল্যজনক রায়। সেই রায়ে বলে দেওয়া হয়েছে অধিকারী বাড়ির ছোট ছেলে সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতর অভিযোগে এফআইআর দায়ের করতে হবে। কাঁথির পুরভোট যখন দোরে কড়া নাড়ছে ঠিক তখন সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে আদালতের এই রায় নিঃসন্দেহে একটা বড় ধাক্কা। তবে ঘটনাচক্রে এবারে সৌমেন্দু বা অধিকারী পরিবারের কেউই পুরনির্বাচনে প্রার্থী হয়নি। আরও বলা ভাল বিজেপি অধিকারী পরিবারের কাউকে প্রার্থী করেনি। স্বাভাবিক ভাবেই সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে আদালতের এই রায় নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছে না গেরুয়া শিবির।
জানা গিয়েছে, কাঁথির প্রভাত কুমার কলেজের একটি ভবন তৈরির কাজে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন আবু সোহেল নামে এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ, প্রভাত কুমার কলেজের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সৌমেন্দুর হাত ধরে এই দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। সৌমেন্দু পদে থাকাকালীন কলেজ ইউনিয়নকে কাজে লাগিয়ে কলেজের বিল্ডিং নির্মাণ ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতি করেন। কলকাতা হাইকোর্ট অবশ্য মামলাটি কাঁথি মহকুমা আদালতে ফেরত পাঠায়। কেননা নিম্ন আদালতকে এড়িয়ে সোজা হাইকোর্টে এই বিষয়ে মামলা ঠোকার বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি আদালত। এরপরেই কাঁথি মহকুমা আদালতে এই মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদালত কাঁথি থানার আইসি-কে নির্দেশ দিয়েছে, কাঁথি কলেজে ভবন তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় এফআইআর দায়ের করতে হবে। সন্দেহ নেই আদালতের এই রায় অধিকারীদের অস্বস্তিতে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট।
ঘটনার জেরে আবু সোহেলের আইনজীবী মঞ্জু রহমান খান জানিয়েছেন, কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন আবু সোহেল। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই কাঁথি এসিজেএম আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। সেখানেই দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাঁথির পিকে কলেজের ভবন তৈরির ক্ষেত্রে কোনও প্ল্যানিং ছাড়াই ভবন তৈরি করা হয়েছিল। চারটি বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছিল। আর সেই বিল্ডিং তৈরি করার ক্ষেত্রে কোনও আইনি পথ অবলম্বন করা হয়নি। কী ভাবে প্ল্যানিং ছাড়াই বিল্ডিং তৈরি হল, তা নিয়েই প্রশ্ন।’ তবে, এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ সৌমেন্দু অধিকারী। এই মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রমাণ দিতে বলুন। মুখে তো ট্যাক্স লাগে না। ভোটের সময় যা খুশি বলা যায়। অনেক মামলাই তো হয়েছে, নাহয় আরও একটা হবে। যা হবে দেখা যাবে।’ ঘটনার জেরে এদিন মুখ খুলেছেন এলাকার তৃণমূলকর্মীরাও। তাঁদের দাবি, ‘ওই পরিবার দুর্নীতির পাহাড়ে বসে আছে। সব ধরনের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিপুল দুর্নীতি করেছে বছরের পর বছর ধরে। নাম বদল করে এক রাস্তা ৩ বার করা হয়েছে। সেই কাজ দেখিয়ে টাকা মারা হয়েছে। খাতায় কলমে শহরের মোড়ে মোড়ে আলোর স্ট্যান্ড তৈরির যে গল্প দেখানো হয়েছে বাস্তবে সেই রকম উচ্চতার কোনও স্ট্যান্ডই বসেনি। সব আস্তে আস্তে সামনে আসছে। তদন্তে সব বেরোবে।’