নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রায় ৪ বছরের লড়াই। অবশেষে সেই লড়াইয়ের পরে কিছুটা হলেও জয়ের মুখ দেখতে পেলেন বৃদ্ধা মায়া পাল। ছেলে, বৌমা ও নাতির খুনির শাস্তির দাবিতে আদালতে প্রত্যেক শুনানিতে উপস্থিত থেকেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেই আদালত তাঁকে নিরাশ করেনি। দোষীকে শুনিয়েছে ফাঁসির সাজা। ২০১৯ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ মহকুমার জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা এলাকার লেবুবাগানে নিজের বাড়িতেই খুন(Jiaganj Murder Case 2019) হয়েছিলেন স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল এবং তাঁদের ৬ বছরের ছেলে আর্য পাল। চাঞ্চল্যকর সেই খুনের ঘটনায় গোটা রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ কয়েকদিন পড়েই গ্রেফতার করা হয় মূল অভিযুক্ত উৎপল বেহেরাকে। মঙ্গলবার এই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত উৎপল বেহেরাকে বহরমপুর জেলা জজ আদালতের(Baharampur First Track Court) বিচারক সন্তোষ কুমার পাঠক দোষী সাব্যস্ত করেন। আর এদিন তিনিই শোনালেন রায়। ফাঁসির সাজা(Death Sentence) শুনিয়েছেন তিনি উৎপল বেহেরাকে।
২০১৯ সালের দুর্গাপুজোর দশমীর দিন নিজের বাড়িতেই নৃশংসভাবে খুন হন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল ও ছ’বছরের ছেলে আর্য পাল। উদ্ধার হয়েছিল ৩জনের গলাকাটা রক্তাক্ত মৃতদেহ। সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই পুলিশ উৎপল বেহেরাকে গ্রেফতার করে। হাড়হিম করা এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথমে খুনের উদ্দেশ্য নিয়েই ধন্দে ছিল পুলিশ৷ পরে তদন্তে উঠে আসে, অভিযুক্ত উৎপল বেহেরার বিমার টাকা জমা দেননি স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল৷ টাকা ফেরত না পেয়ে সেই রাগেই সপরিবার বন্ধুপ্রকাশকে খুন করে উৎপল৷ গত চার বছর ধরে মামলা চলছিল বহরমপুর জেলা জজ আদালতে। ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের ভিত্তিতে মঙ্গলবার খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত উৎপল বেহেরাকে বহরমপুর জেলা জজ আদালতের বিচারক সন্তোষ কুমার পাঠক দোষী সাব্যস্ত করেন।
বিগত ৪ বছর ধরে ছেলে, বৌমা ও নাতির খুনির শাস্তির দাবিতে প্রত্যেক শুনানিতে উপস্থিত থেকেছেন বন্ধুপ্রকাশ পালের বৃদ্ধা মা মায়া পাল। গত মঙ্গলবার বিচারক উৎপল বেহেরাকে দোষী সাব্যস্ত করার পর কাঁদতে কাঁদতে বৃদ্ধা মায়া পাল বলেন, ‘আমার পরিবারকে পুরো শেষ করে দিয়েছে। ছেলেকে খুব কষ্ট করে মানুষ করেছিলাম। বৌমাও খুব ভাল ছিল। শেষ অষ্টমীর দিন সবার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সেটাই সারাজীবনের জন্য শেষ দেখা জানতাম না। ছোট নাতিটাকে ছেড়ে দিলেও বাচ্চাটা আজ বেঁচে থাকত। আমি চাই ওই উৎপল বেহেরাকে ফাঁসি দেওয়া হোক। আমি ওর ফাঁসি চাই।’ এদিন বিচারক তাঁর সেই আর্জি রেখেছেন। দোষী উৎপল বেহরাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে বহরমপুরে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। এক লাইনের নির্দেশে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিন এই খুনের ঘটনায় সরকারি আইনজীবি বিভাস চট্টোপাধ্যা জানিয়েছেন, ‘এই খুনের ঘটনায় ফরেন্সিক রিপোর্ট, ইলেকট্রনিক্স প্রমাণ ও ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত উৎপল বেহেরা দোষী প্রমাণিত করা হয়েছে। আর এই মামলায় সারা ভারতবর্ষে প্রথম রাইট ব্লকার ব্যবহার করা হয়েছে যাতে কোনও ইলেকট্রনিক্স প্রমাণ পরিবর্তন করা সম্ভব না। হয়। রাইট ব্লকারের মাধ্যমে সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ বিচারককে দেখানো হয়েছে। খুনে যে ধারালো হাঁসুয়া ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই অস্ত্রে উৎপল বেহেরার আঙুলের ছাপ ফরেন্সিক রিপোর্টে পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও খুনের ঘটনার পর উৎপল বেহেরাকে বন্ধুপ্রকাশ পালের বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে দেখেছিলেন দু জন। তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এই সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিচারক উৎপল বেহেরাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তাকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়েছে।’