নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলা তথা দেশের মধ্যে সরকারি কর্মসূচি হিসাবে মানুষের দাগ কাটতে সফল হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) চালু করা ‘দুয়ারে সরকার’(Duyare Sarkar) কর্মসূচি। এই কর্মসূচি যখনই বাংলার(Bengal) বুকে আয়োজিত হয় তখনই যে শুধু সেখানে আমজনতার ঢল নামে তাই নয়, দেশে বিদেশে এই কর্মসূচি রীতিমত সেরার শিরোপাও পেয়ে চলেছে ক্রমাগত। গতকাল শনিবার ছিল ২০২২ সালের শেষ দিন, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর। আর এই দিনেই শেষ হয় গত বছরের দুয়ারে সরকারের ২ মাস ধরে চলা কর্মসূচি। সেই কর্মসূচি সমাপনের পরেই দেখা যাচ্ছে এই দুই মাসে রাজ্যের প্রায় ১ কোটি মানুষ এর সুবিধা নিয়েছেন। নবান্নের(Nabanna) হিসাব বলছে পঞ্চম দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মাধ্যমে টানা দু’মাস ধরে প্রায় ১ কোটি মানুষ তাঁদের চাহিদা পূরণের নানা দাবি দাওয়া জানিয়েছেন। আর সে সবের মধ্যে সব থেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছে স্বাস্থ্যসাথীর(Sasthasathi) কার্ডের জন্যই।
আরও পড়ুন Happy Birthday TMC, ফেসবুকে শুভেচ্ছা বার্তা অগ্নিকন্যার
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম দুয়ারে সরকার প্রথমে ১ মাসের জন্যই আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরে তা বাড়িয়ে ২ মাসের জন্য করে দেন। এই দু’মাসে মোট ৮২ হাজার ৩৪৫টি শিবিরের আয়োজন করা হয়। যার মধ্যে ২৮ হাজার ৩৮১টি ছিল ভ্রাম্যমাণ। এই ভ্রাম্যমাণ শিবিরগুলির মাধ্যমে ১৪.৯৫ লক্ষ মানুষের উপকৃত হয়েছেন। অন্যদিকে এই কর্মসূচিতে যে সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য তাতে দেখা যাচ্ছে সব থেকে বেশি এগিয়ে আছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পই। স্বাস্থ্যসাথীর জন্য আবেদন জমা পড়েছে ১০ লক্ষ, কৃষকবন্ধু প্রকল্পের জন্য ৮.৩৪ লক্ষ, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য ৭.৬১ লক্ষ এবং মৎস্যজীবিদের নাম নথিভুক্তির জন্য আবেদন জমা পড়েছে ৬.৫৮ লক্ষ। এছাড়াও রূপশ্রী, সবুজশ্রী, ঐক্যশ্রী সহ রাজ্যের আরও ৩২টি প্রকল্পের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। সব মিলিয়ে শুধু সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য ৩৫ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। নতুন সংযোজিত প্রকল্পগুলির মধ্যে ১.২ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে জমির পাট্টা চেয়ে, ২.২৫ লক্ষ জমা পড়েছে বিদ্যুৎ বিলে ছাড় চেয়ে এবং ১.২৭ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য।
আরও পড়ুন লক্ষ্যপূরণ করে আবাস শীর্ষে বাংলা, প্রশ্নে স্বচ্ছতা
পঞ্চম্ন দুয়ারে সরকার কর্মসূচিকে সফল করতে একাধিকবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদ্বী। ভ্রাম্যমাণ শিবিরের মাধ্যমে রাজ্যের প্রান্তিক এলাকায় পৌঁছনোর নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। যাতে কোনও ব্যক্তি রাজ্যের প্রকল্পগুলির সুবিধা পাওয়া বঞ্চিত না হন। সম্প্রতি এই প্রকল্পকে সেরার শিরোপা দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রক এবং সব রাজ্যের মোট ৮০০টি প্রকল্পের মধ্যে সেরা বিবেচিত হয়েছে বাংলার এই প্রকল্প। ২০২২ সালের ডিজিটাল ইন্ডিয়া পুরস্কারের পাবলিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ক্ষেত্রে প্ল্যাটিনাম পুরস্কার পেয়েছে এই প্রকল্প। কেন্দ্রের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক রাজ্যকে এই পুরস্কারের জন্য সেরা বিবেচিত করেছে। নয়াদিল্লির বিজ্ঞানভবনে আগামী ৭ জানুয়ারি সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই পুরস্কার তুলে দেবেন রাজ্যের প্রতিনিধিদের হাতে। এর পরেও বিরোধী দলগুলি বাংলার এই সব প্রকল্পগুলিকে ‘ভাঁওতাবাজি’, ‘লোক ঠকানো’, ‘ভোট গপ্পো’ বলে কটাক্ষ হেনে চলেছে। যদিও এই কর্মসূচিতে আমজনতার অংশগ্রহণ বলে দিচ্ছে তাঁরা এই সব প্রকল্পের ওপর কতখানি আস্থা রাখছেন, ভরসা রাখছেন, বিশ্বাস রাখছেন। সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ওপর তাঁরা আস্থা রেখে চলেছেন।