নিজস্ব প্রতিনিধি: উপনির্বাচনে শাসক শিবিরের জয় স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে দেড় লক্ষের বেশি ভোটে জয়! এই প্রশ্নটাই এখন আছড়ে পড়ছে দিনহাটা থেকে কোচবিহার জুড়ে মায় বাংলার আনাচেকানাচে। কেননা এদিন যে ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল সামনে এসেছে তার মধ্যে কোচবিহার জেলার দিনহাটায় তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ ১ লক্ষ ৬৩ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিজেপিকে হারের মুখ দেখতে হয়েছে নিশীথ প্রামাণিকের নিজের বুথে। বিজেপিকে হারের মুখ দেখতে হয়েছে তাঁদের প্রার্থী অশোক মণ্ডলের বুথেও। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে মাত্র ৬ মাস আগে যে জেলায় ৯টি আসনের মধ্যে ৭টিতেই বিজেপির জয় হয়েছিল, সেই জেলাতেই কেন এমন ন্যাক্কারজনক হার গেরুয়া শিবিরের? নেপথ্যে কোন কারন লুকিয়ে রয়েছে? কেন এই বিশাল ব্যবধানে জয় তৃণমূলের?
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলার ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল মাত্র ২টি আসনে। মেখলিগঞ্জ ও সিতাইয়ে। দিনহাটায় বিজেপির তরফে প্রার্থী হয়েছিলেন খোদ জেলার সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। নিশীথ শুধু কোচবিহারের সাংসদই ছিলেন না তিনি দিনহাটার বাসিন্দা ও ভোটারও। যদিও তাঁর নাগরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল সহ অনান্য রাজনৈতিক দলও। সেই নিশীথ দিনহাটায় জিতেছিলেন মাত্র ৫৭ ভোটে, যা পরাজয়েরই নামান্তর। তার জেরেই সাংসদ পদ ধরে রেখে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন নিশীথ। আর এই কারনেই দিনহাটায় হয়েছে উপনির্বাচন। কিন্তু সেই উপনির্বাচনের ফলাফল বলে দিচ্ছে নিশীথ এফেক্ট দিনহাটায় শুধু ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে তাই নয়, বিজেপির বিরুদ্ধে যেন গণরোষ আছড়ে পড়েছে উপনির্বাচনের ইভিএমে। কিন্তু কেন এই গণরোষের বিস্ফোরণ? সেটা কী শুধুই নিশীথের বিরুদ্ধে ক্ষোভ? উদয়ন গুহের ওপর হামলার জেরে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ? নাকি শীতলকুচির রেশ!
ওয়াকিবহাল মহল অবশ্য মনে করছে দিনহাটায় এই বিপুল জয়ের পিছনে শীতলকুচিতে গত ১০ এপ্রিল ভোট চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪জন নিরীহ ভোটার মারা যাওয়ার ঘটনাই কাজ করেছে। যে ভাবে বিজেপি কেন্দ্রীয় এজেন্সি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে বাংলা দখল করতে নেমে পড়েছিল তার সব থেকে হিংসাত্মক ছবি ছিল শীতলকুচির ওই গুলি চালনার ঘটনা। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার পরে বিজেপির নেতারা যেভাবে প্রকাশ্যে বার বার ‘গুলি করে মারবো’ আউড়ে গিয়েছেন তা কোচবিহার জেলার মানুষের মনেও ভয়-ভীতি-আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। সেই সঙ্গে জন্ম দিয়েছিল গণরোষের যা সেদিন বাইরে বেড়িয়ে আসতে না পারলেও দিনহাটার উপনির্বাচনে তা বাইরে বেড়িয়ে এসেছে। দিনহাটার জনতার রায় সুনামি হয়ে আছড়ে পড়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। আর তার জেরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বুথে গোহারান হেরেছে বিজেপি। হেরেছে দলের প্রার্থী অশোক মণ্ডলের বুথেও। এবারের নির্বাচনে ৯২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে ছিলেন অমিত শাহ। তার মধ্যে শুধু দিনহাটাতেই মোতায়েন করা হয়েছিল ২৭ কোম্পানি বাহিনী। প্রতিটি বুথে মোতায়েন ছিল ৫-৬জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। তাই বুথ দখল করে ছাপ্পা মেরে জয়ের প্রশ্নই আসছে না। দিনহাটা যে বিজেপির দিক থেকে মুখ ফেরাচ্ছে সেটা পরিষ্কার বোঝা গিয়েছিল ভোটের দিনই যখন নিশীথ তাঁর নিজের বুথেই দলের এজেন্টকে বসাতে পারেননি। সেদিনই কার্যত তৃণমূলের জয় সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অতিবড় তৃণমূল সমর্থকও ভাবতে পারেননি জয় আসবে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে। আর এখানেই জোরদার হয়ে উঠছে শীতলকুচির এফেক্ট।