নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গের বুকে গরুমারা(Gorumara) ও জলদাপাড়ায়(Jaldapara) প্রতিবছর ভিড় জমান দেশী-বিদেশী পর্যটকেরা। নেপথ্যে বাংলার(Bengal) গর্ব একশৃঙ্গ গণ্ডার(One Horn Rino)। কিন্তু সেই দুই জঙ্গলেই গত কয়েক বছর ধরে চোরাশিকারীদের উপদ্রপ যেমন বাড়তে দেখা যাচ্ছে তেমনি সঙ্গিনী দখলের লড়াইও বেড়ে চলতে দেখা যাচ্ছে। এই দুই বিষয়ে রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গণ্ডার বিশেষজ্ঞরা। শুধু উদ্বেগ প্রকাশই নয়, তাঁরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের জন্য বিকল্প বিচরণস্থল চালু করার সুপারিশও করেন। সেই সূত্রেই রাজ্য সরকার কোচবিহার জেলার পাতলাখাওয়ার রসমতীর জঙ্গলে একশৃঙ্গ গণ্ডারদের তৃতীয় বিচরণস্থল চালু করতে চলেছে। সেই সঙ্গে চতুর্থ বিচরণস্থল হিসাবে তাঁরা দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর বা ঝাড়গ্রামের কোনও একটি জায়গা বেছে নিতে চাইছে রাজ্য সরকার। আর এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। উচ্ছেদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করছেন এই চারটি জেলার বিভিন্ন জঙ্গল ও জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা।
গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্বগণ্ডার দিবস। সেই উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক(Jyotipriya Mallick) জানান, ‘জলদাপাড়ার ওপর চাপ কমাতে কোচবিহার রাজাদের মৃগয়াক্ষেত্র পাতলাখাওয়ার রসমতীর জঙ্গলে একশৃঙ্গ গণ্ডারদের তৃতীয় আবাসভূমি তৈরি করা হয়েছে। আাগামী তিন মাসের মধ্যে সেখানে ধাপে ধাপে ১০টি গণ্ডারকে স্থানান্তরিত করা হবে। যার মধ্যে থাকবে ৪টি পুরুষ ও ছয়টি মাদি গণ্ডার। এছাড়া দক্ষিণবঙ্গেও আমরা গণ্ডারদের নিয়ে যাব। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এই চারটি জেলার মাঝামাঝি কোনও উপযুক্ত চতুর্থ আবাসস্থল খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সবুজ সঙ্কেত দিলেই জলদাপাড়া থেকে নতুন অতিথিদের নিয়ে আসার পদক্ষেপ করা হবে। রেডিয়ো কলার পরিয়ে ২টি পুরুষ ও ৪টি মাদি গণ্ডার নিয়ে যাওয়া হবে সেখানে।’ আর এই ঘোষণা ঘিরেই ছড়িয়েছে আশঙ্কা।
দক্ষিণবঙ্গের যে ৪টি জেলার মধ্যে কোনও এক জায়গায় একশৃঙ্গ গণ্ডারদের জন্য চতুর্থ বিচরণস্থ গড়ে তুলতে চাইছে রাজ্য সরকার সেই ৪টি জেলার বাসিন্দারা কয়েক দশক ধরেই হাতির হানায় রীতিমত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ও হয়ে চলেছেন। প্রতি বছর হাতির হানায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হন, অনেকে মারাও যান। হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় মাঠের ফসল, ঘরবাড়ি, খাদ্য। দলমার পাহাড় থেকে আসা এই হাতির দলের কয়েকটি আবার এই ৪টি জেলার নানা জঙ্গলে স্থায়ী ভাবে থাকতেও শুরু করে দিয়েছে। এই হাতির হানা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দাদের ক্ষোভ প্রশমণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষতিপূরণ বাবদ নগদ অর্থ প্রদান করার নীতি চালু করার পাশাপাশি নিহত ব্যক্তি বা মহিলার পরিবারের একজন সদস্যকে রাজ্য পুলিশে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার নীতিও চালু করেছেন। কিন্তু তারপরেও হাতির হানা নিয়ে আমজনতার ক্ষোভ বা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঘটনা থেমে যায়নি। এই সমস্যা না মিটিয়ে গণ্ডারের চতুর্থ বিচরণস্থল গড়ে তোলার এই সিদ্ধান্ত এই চারটি জেলার জঙ্গল ও জঙ্গল লাগোয়াব বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
যদিও বনদফতরের আধিকারিকদের দাবি, দক্ষিণবঙ্গে একশৃঙ্গ গণ্ডারদের চতুর্থ বিচরণস্থল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত এখন একদম প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আগে জায়গা অনুসন্ধান করা হবে, তারপর সেখানে জলাভূমি গড়ে গণ্ডারদের অতিপ্রিয় ঢাড্ডা, পুরুন্ডি, চেপ্টি ও মালশার মতো ঘাসবন গড়ে তুলতে হবে। তারপর সেখানকার নিরাপত্তা জোরদার করে পরীক্ষামূলক ভাবে ৩-৪টি গণ্ডার নিয়ে ছাড়া হবে। দেখা হবে সেই পরিবেশ তাঁরা মানিয়ে চলতে পারছে কিনা। তারপরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।