নিজস্ব প্রতিনিধি: অনশন আর করা হল না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন তিনি। আমরণ অনশন মঞ্চ ছেড়ে যেতে হল হাসপাতালে। জিটিএ নির্বাচন স্থগিত করার দাবিতে অনড় থেকে শুরু করেছিলেন অনশন। তবে নির্বাচনে অনড় ছিল রাজ্য সরকার। পঞ্চম দিনের অনশনে ভেঙেছিল শরীর। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, শরীরের অবস্থা খারাপ। রক্তচাপ ওঠা-নামা করছে। প্রস্রাবে রক্ত বেরিয়ে আসছে। সোডিয়াম- পটাশিয়াম অনিয়ন্ত্রিত। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তখন কান দেননি ‘অনড়’ গুরুং। অবশেষে হাসপাতালই ঠিকানা হল তাঁর।
বিমল গুরুং ভেবেছিলেন অনশনের হুমকি দিলেই রাজ্য সরকার গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমেন্সট্রেশন(GTA) বা জিটিএ’র নির্বাচন স্থগিত করে দেবে। কিন্তু তা যে হবে না সেটা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার জেরে দ্বিতীয় ধাপে বসেছিল রিলে অনশন, যাতে রাজ্য সরকার সতর্ক হয়। কিন্তু তার মধ্যেও জিটিএ’র নির্বাচনের তারিখ সংবাদমাধ্যম দেখাতে শুরু করে। শেষে তিনি নিজেই শুরু করেছিলেন আমরণ অনশন । কিন্তু তা দেখেও জিটিএ’র নির্বাচনে অনড় রয়েছে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং এখন পড়েছিলেন দোটানায়। তাঁর অনশনে না তাঁর না মোর্চার কোনও রাজনৈতিক ফায়দা হচ্ছে, না ফিরেছে কোনও জনসমর্থন। তার ওপর অনশনের জেরে শরীর ভাঙতে শুরু করেছিল মোর্চা সুপ্রিমোর। অবশেষে ঠিকানা হল হাসপাতাল।
জানা গিয়েছে, টানা অনশনের জেরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে গুরুংয়ের। একাধিক সমস্যা দেখা গিয়েছে তাঁর শরীরে। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শও দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তবুও অনশনের সিদ্ধান্তেই অনড় ছিলেন মোর্চা প্রধান। অনশনের পঞ্চম দিনে শারীরিকভাবে আরও অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। আগে হাঁটাতলা করতে পারলেও সেই ক্ষমতাও পরে আর ছিল না শরীরে। সারাক্ষণই শুয়ে ছিলেন তিনি। আর তাঁকে ঘিরে ছিল গুটিকয় অনুগামী। তবে গত কয়েকদিনে গুরুংয়ের সঙ্গে পাহাড়ের অনেক রাজনীতিবিদই দেখা করতে এসেছিলেন। রবিবার যেমন এসেছিলেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। গুরুংয়ের অনশন মঞ্চে গিয়েছিলেন বিধায়ক নিরজ জিম্বাও। গুরুংকে অনশন তুলে নেওয়ার জন্য তাঁরা প্রত্যেকেই অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু, অনশন তুলবেন না বলে তাঁদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন গুরুং। আর জেদের বশেই এখন তাঁকে ভর্তি হতে হল হাসপাতালে।
গুরুংয়ের শারীরিক পরীক্ষার পর এদিন চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, ‘বিমলের শারীরিক পরিস্থিতি এই মুহূর্তে খুবই খারাপ। রক্তচাপ ওঠানামা করছে। প্রস্রাবে রক্ত আসছে। হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত। সোডিয়াম ও পটাশিয়ামও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে।’ তবে শরীর খারাপ হলেও অনশন তুলবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন দিয়েছিলেন গুরুং। শনিবার গুরুংয়ের অনশন মঞ্চে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক। বুলুও গুরুংকে অনশন ভাঙার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু, অনশন তুলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন গুরুং। তার আগে হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ডও গিয়েছিলেন গুরুংয়ের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু কারোর কথাতেই কান দিচ্ছিলেন না গুরুং। আর তাতেই বিপদ বেড়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার এই পরিণতি হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত হাসপাতালেই থাকতে হবে গুরুংকে।