নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার বুকে বয়ে গিয়েছিল গেরুয়া ঝড়। তার জেরেই জঙ্গলমহলের ৫টি লোকসভা কেন্দ্রেই ফুটেছিল পদ্মফুল। সেই সময় যে ৫জন বিজেপির হয়ে জয়ী হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৩জনকে এবারেও বিজেপি ওই আসন থেকেই প্রার্থী করেছে। এরা হলেন পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের জন্য জ্যোতির্ময় সিং মাহাত, বাঁকুড়ার ক্ষেত্রে সুভাষ সরকার এবং বিষ্ণুপুরের জন্য সৌমিত্র খাঁ। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁকে দল এবার আর মেদিনীপুর থেকে প্রার্থী করেনি। করেছে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন থেকে। মেদিনীপুরে প্রার্থী করা হয়েছে অগ্নিমিত্রা পালকে। বাকি ঝাড়গ্রাম লোকসভা(Jhargram Constituency) কেন্দ্র নিয়েই এখন আসল গপ্পো। এই কেন্দ্র থেকে গতবার অর্থাৎ উনিশের ভোটে বিজেপির প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিলেন কুনার হেমব্রম(Kunar Hembram)। এবার দল তাঁদে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করার আগেই তিনি দল ছাড়েন। যদিও নিজের সাংসদ পদ তিনি এখনও ছাড়েননি। ফলে বিজেপিও কিছুটা অসুবিধায় পড়ে গিয়েছে। তাঁরা এখনও এও কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি। তবে যেটা চোখে পড়ছে তা হল তৃণমূলের প্রার্থীর হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়েছেন কুনার।
হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। তৃণমূল(TMC) প্রার্থী তথা সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সরেনের(Kalipada Soren) হয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন বিজেপি(BJP) সাংসদ কুনার হেমব্রম। কেননা, সম্পর্কে তাঁরা আত্মীয়। কুনারের শ্যালক হলেন কালীপদ। কুনারের স্ত্রীর পিসতুতো দাদা হন তৃণমূল প্রার্থী। সেই শ্যালক ভগ্নীপতির কাছে আর্জি রেখেছিলেন তাঁর হয়ে প্রচার করার জন্য। সেই আর্জি ফেরাননি কুনার। বিজেপি সাংসদ জানিয়েছেন, ‘বড় শ্যালক বাড়িতে এসে সহযোগিতা চেয়েছেন। দু’চার দিন প্রচারে যেতে হবে। তবে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরব না। নিজের দল ছেড়েছি। অন্য কোনও দলে যাব না।’ আবার তৃণমূলের প্রার্থী জানিয়েছেন, ‘উনি আমার সঙ্গে প্রচারে থাকলে এটা বড় প্রাপ্তি।’ সূত্রের খবর, জেলা তৃণমূলের এক সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শে কুনারের বাড়িতে গিয়ে প্রচারের যাওয়ার অনুরোধ করেন কালীপদ। সেই অনুরোধ ফেরাতে পারেননি ভগ্নীপতি। তৃণমূল প্রার্থী শ্যালকের হয়ে তাই প্রচার করবেন বিজেপির দলত্যাগী সাংসদ!
মার্চের গোড়ায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর আসনে বিদায়ী ৩ সাংসদকেই প্রার্থী ঘোষণা করে গেরুয়া শিবির। তবে ঝাড়গ্রামে কুনারকে প্রার্থী করেনি তাঁরা। এরপরই ৮ মার্চ দলের জেলা ও রাজ্য সভাপতিকে চিঠি দিয়ে ব্যক্তিগত কারণে দলের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানান কুনার। তবে সাংসদ পদে ইস্তফা দেননি। দলত্যাগের পর ঝাড়গ্রাম স্টেশনে রেলের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন সাংসদ। কালীপদ থাকেন ঝাড়গ্রাম শহরের ভরতপুরে। লাগোয়া গ্রামীণ এলাকার কন্যাডোবায় কুনারের বাড়ি। দু’জনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভাল। ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন কালীপদ। ২০২০ সালে তৃণমূলের এক দলবদল কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক জনসভায় কালীপদকে রাজ্যের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণে সম্মানিত করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই ১০ মার্চ ব্রিগেডের জনগর্জন সভা থেকে ঝাড়গ্রাম আসনের দলীয় প্রার্থী কালীপদের নাম ঘোষণা করে তৃণমূল।