নিজস্ব প্রতিনিধি: শাহি সভা ছিল গতকাল। সেই সভার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ফের বাংলার শাসক দলের নেতাদের বাড়িতে এদিন সকাল থেকেই শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI’র হানাদারি। কলকাতা পুরনিগমের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরনিগমে তৃণমূলের মুখ্যসচেতক বাপ্পাদিত্য দাসগুপ্তের বাড়িতে এদিন সবার আগে হানা দেয় CBI। সেই সঙ্গে হানা দেওয়া হয় বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র পারিষদ তথা তৃণমূল বিধায়ক অদিতি মুন্সির স্বামী দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতে। একই সঙ্গে হানাদারি চলে মুর্শিদাবাদ জেলার(Murshidabad District) ৪ জায়গায়। সেই ৪টি জায়গার মধ্যে রয়েছে ডোমকলের(Domkal) তৃণমূল বিধায়ক(TMC MLA) জাফিকুল ইসলামের(Jafikul Islam) বাড়ি। হানা দেওয়া হয় কোচবিহার জেলার কোচবিহার-২ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি সজল সরকারের বাড়িতে ও ব্যবসায়ী শ্যামল করের বাড়িতে। এদের মধ্যে বাপ্পাদিত্যের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছেন CBI আধিকারিকেরা। সজল সরকারের বাড়ি থেকেও বেড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর আধিকারিকেরা। তবে বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়িতে আনা হয়েছে টাকা গোনার মেশিন(Money Counting Machine)। সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে বিপুল নগদ টাকার সন্ধান মিলেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মুর্শিদাবাদের জাফিকুলের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে CBI। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। তার পর বাড়ির সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ভিতরে ঢোকেন তদন্তকারীরা। শুরু হয় তল্লাশি। তার কয়েক ঘণ্টা পর দেখা যায়, কয়েক জন আধিকারিক জাফিকুলের গ্যারাজের পিছন দিকে দু’টি ব্যাগ উদ্ধার করেছেন। তাতে ভরা রয়েছে নথি। সেই নথি আলাদা আলাদা করে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন গোয়েন্দারা। দুপুর নাগাদ জানা যায়, বিধায়কের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে। কত টাকা রয়েছে তা জানার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে টাকা গোনার যন্ত্র। সেই যন্ত্র দিয়ে টাকা গুনে দেখা হবে। এত পরিমাণ নগদ টাকা কেন বিধায়কের বাড়িতে রাখা ছিল তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানাননি বিধায়ক জাফিকুল। বিধানসভার অধিবেশন চলার কারণে বর্তমানে কলকাতায় রয়েছেন জাফিকুল। সূত্রের খবর, জাফিকুলের বাড়ির শৌচাগার এবং শোয়ার ঘরের বাঙ্ক থেকে নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে। কত টাকা রয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে টাকা গোনার যন্ত্র ঢুকতে দেখে অনুমান, বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা সম্ভবত উদ্ধার হয়েছে বাড়ির ভিতর থেকে।
এদিন মুর্শিদাবাদ জেলারই বড়ঞার কুলিতে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ী সুজল আনসারি ওরফে ঝন্টু শেখের বাড়িতেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা হানা দেন। ঝন্টু নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষের ঘনিষ্ঠ। এ ছাড়াও তাপস মণ্ডল, জীবনকৃষ্ণ সাহা এবং মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও ঝন্টুর যোগাযোগ রয়েছে বলে খবর। তাঁর বাড়িতে যখন তল্লাশি চলছে, তখনই খবর পাওয়া যায়, ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুলের বাড়িও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলে তল্লাশি শুরু করেছে CBI। জাফিকুলের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁদের বয়ানও রেক়র্ড করেন CBI আধিকারিকেরা। এখন জানা যাচ্ছে, এই নগদ টাকার যথাযথ হিসাব যদি বিধায়ক জাফিকুল না দিতে পারেন তাহলে তাঁকে গ্রেফতার করাও হতে পারে। জাফিকুলকে নাকি এদিনই কলকাতা থেকে তাঁর ডোমকলের বাড়িতে ফিরতে নির্দেশ দিয়েছেন CBI আধিকারিকেরা। জাফিকুলের ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। পাওয়া যায়নি তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়াও।