নিজস্ব প্রতিনিধি: অনুব্রত (Anubrata) মণ্ডলের ফুসফুসের অবস্থা ভাল না। সেই কথাই বলেছিল এসএসকেএম (SSKM) রিপোর্ট। এবার চিকিৎসকদের আরও এক তথ্য রীতিমত ভয়ঙ্কর। বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতির অণ্ডকোষের অবস্থা ভাল না, জানা গিয়েছিল গত মঙ্গলবার। সূত্রের খবর ছিল, একটি নয় দুটি অণ্ডকোষের অবস্থাই খারাপ। বুধবার জানা গিয়েছে অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হতে পারে তাঁর দুটি অণ্ডকোষই। তাঁর চিকিৎসা করছেন আট জন চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড। তাই তাঁকে আপাতত থাকতে হবে হাসপাতালেই।
জানা গিয়েছে, অনুব্রত ৬ মিনিটের হাঁটার ওপর পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে মাত্র ৭২ মিটারের বেশি হাঁটলেই কমে যাচ্ছে অক্সিজেন স্যাচুরেশন। সঙ্গে সঙ্গে দিতে হচ্ছে অক্সিজেন। সূত্রের খবর, তাঁর ফুসফুসে এখনও জমে আছে জল। তাঁর দুটি অণ্ডকোষেই জমে আছে পুঁজ। তাই তাঁর অণ্ডকোষ দুটি অস্বাভাবিক ফুলে গিয়েছে। আর তা থেকে নির্গত হচ্ছে পুঁজ। অসহ্য যন্ত্রণায় বিদ্ধ অনুব্রত। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর অণ্ডকোষ দুটি অস্বাভাবিক ফুলে গিয়েছে। আর তা থেকে নির্গত হচ্ছে পুঁজ। অসহ্য যন্ত্রণায় বিদ্ধ অনুব্রত।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা এসে পৌঁছেছিলেন বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সকলেরই অনুমান ছিল, তিনি হাজিরা দেবেন সিবিআই দফতরে। তাঁর হাজিরা দেওয়ার সময় ছিল সকাল ১১ টায়। তবে বুধবার সকালে দেখা গেল রাস্তা থেকে বেরিয়ে অনুব্রত নিজাম প্যালেস নয়, পৌঁছলেন এসএসকেএম হাসপাতালে।
মঙ্গলবার চিনারপার্কের বাড়িতেই রাত কাটিয়েছিলেন অনুব্রত। বুধবার সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে অনুব্রতের গাড়ি ধরে ইএম বাইপাসের রাস্তা। সকলেই ভেবেছিলেন তিনি যাবেন সিবিআই দফতরে। সেই মতো নিজাম প্যালেস জুড়ে বাড়ানো হয়েছিল নিরাপত্তা। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। জেরা করার জন্য প্রস্তুত ছিল সিবিআই। এএসপির নেতৃত্বে ছিল পাঁচ প্রতিনিধি দলের সদস্য।
ইএম বাইপাস হয়ে অনুব্রতের গাড়ি ধরে সোজা মা ফ্লাই ওভারের রাস্তা। এরপর তা সোজা ঢুকে যায় এসএসকেএম হাসপাতালে। অনুব্রত ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে তাঁর বুকে ও পেটে ব্যথা হয়েছিল। তারপরেই যোগাযোগ করা হয়েছিল হাসপাতালে। সকাল ১১ টা ২৫ নাগাদ অবশেষে অনুব্রত আসেন এসএসকেএম-এ। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় দোতলায়। সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ও স্বাস্থ্যকর্মী।
হাসপাতাল সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল, বুকে ও পেটে ব্যথা নিয়ে তিনি ভর্তি রয়েছেন উডবার্ন ব্লকের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয়েছিল ৮ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। উল্লেখ্য, গরুপাচার মামলার তদন্তে এই নিয়ে সিবিআই পঞ্চমবার তলব করেছিল অনুব্রতকে। এদিন ৭ লাইনের একটি চিঠি নিজাম প্যালেসে নিয়ে পৌঁছান অনুব্রতের দুই আইনজীবী। তাতে সই ছিল অনুব্রতর। চিঠিতে লেখা হয়েছিল, তাঁর হাজিরা দেওয়ার সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উপস্থিত হতে পারলেন না। কারণ হিসেবে লেখা ছিল, আগের রাতে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সিবিআই চাইলে এসএসকেএমে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন তদন্তে। প্রসঙ্গত, হাসপাতালে এসে তদন্ত করার আগে চিকিৎসকদের অনুমতি নিতে হবে সিবিআইকে। নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেওয়ার জন্য অনুব্রত চেয়েছেন ৪ সপ্তাহ।
এই ঘটনার একদিন পর জানা গিয়েছিল তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল তবে এখনও রয়েছে কিছু সমস্যা। মূল সমস্যা শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট। আর তা দূর করতেই নাকে বসানো হয়েছিল বিশেষ মেশিন। এদিকে অনুব্রতের শারীরিক অবস্থা কেমন তা জানতে চেয়েছিল সিবিআই। নতুন এই তথ্য সহ তার জবাব দেওয়া হয়েছে সিবিআইকে। এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছিল, অ্যাবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত অনুব্রত। মানে অক্সিজেনের অভাবে দমবন্ধ হয়ে যেতে পারে। জানানো হয়েছে, এই রোগ যাদের থাকে তাদের অনেকেই মুখ হা করে ঘুমোয়। এক্ষেত্রে শ্বাসনালই সরু হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। শ্বাসনালী সরু হয়ে গেলে অক্সিজেন কম পৌঁছায় দেহে। যার ফলে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই অনুব্রতের শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে নাকে বসানো হয়েছে বিশেষ মেশিন। একে অটো সি প্যাপ বলা হয়। জানা গিয়েছিল, আবার মেডিক্যাল বোর্ড বসেছিল বীরভূমের জেলা সভাপতির স্বাস্থ্য রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য। হার্ট ও লিভারের সমস্যা রয়েছে তাঁর তবে কমেছে বুক ধড়ফড়। আরও জানা গিয়েছিল, বিশেষ এই মেশিন বসানোর ফলে কমবে ডায়াবেটিস, ধড়ফড় ভাব। স্বাভাবিক থাকবে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ। রাতে না ঘুমানোর ফলে দিনে ঝিমোচ্ছিলেন অনুব্রত। সেই নির্ঘুম অবস্থা বা ঝিমুনিও থাকবে না আর। গত ২ দিন তাঁকে অক্সিজেন দিতে হয়েছে কিন্তু ত্রো আর প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আপাতত বাইরে থেকে আনা খাবার খেতে পারছেন অনুব্রত।
অনুব্রতের শরীর কেমন আছে, তা জানতে চেয়েছিলেন সিবিআই (CBI) আধিকারিকরা। সেই তথ্য জানানো হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি বিশেষ এই যন্ত্র বসানোর কথাও জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেই রিপোর্ট পাঠিয়েছিল তাদের প্রধান দফতর দিল্লিতে। সিবিআই চায় তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে এসে এইমস-এ চিকিৎসা করাতে।