নিজস্ব প্রতিনিধি: বাবুল সুপ্রিয় দুই দফায় আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির দুই দফার সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের পুজোর আগেই বাবুল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। সেই সঙ্গে ইস্তফা দেন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকেও। তার জেরেই সেই আসন এখন শূন্য। নিয়ম অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে এই আসনে তাই উপনির্বাচন করিয়ে নিতে হবে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত ওই আসনে কবে নির্বাচন হবে তার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি। এরই মধ্যে আসানসোল পুরনিগমের নির্বাচন হওয়ার কথা। রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে পুরনির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়ে দিনক্ষন জানাবে। মনে করা হচ্ছে কলকাতা ও হাওড়া পুরনিগমের নির্বাচনের পরেই আগামী বছরের জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারি মাসে আসানসোল সহ রাজ্যের শতাধিক পুরসভায় নির্বাচন করানো হবে। এখন বামেরা চাইছেন, বার বার নয়, আসানসোল পুরনিগম ও লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন একই দিনে হোক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বামেরা কেন দ্রুত নির্বাচন চাইছেন! দ্রুত নির্বাচনের দাবি তোলার পিছনে বামেরা স্থানীয় উন্নয়নকেই তুলে ধরছে। আসানসোল লোকসভার প্রাক্তন বাম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘সাংসদ এলাকায় উন্নয়নের জন্য চলতি বছরে দেশের সমস্ত সাংসদদের তহবিলে দু’কোটি টাকা করে বরাদ্দ করবে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বর্তমানে কোনও সাংসদ নেই। তাহলে আসানসোলের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কিভাবে খরচ হবে? এলাকার উন্নয়ন কী হবে না?’ যদিও ওয়াকিবহাল মহলের ধারনা, বামেরা দ্রুত নির্বাচন চাইছে বিজেপিকে কোনঠাসা করার জন্যই। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বাংলায় একটি বিষয় কার্যত পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে এ রাজ্যে বিজেপি বাড়ছে বাম ভোট ব্যাঙ্ককে নিজের দিকে টেনে এনেই। মানে বাম ভোট চলে যাচ্ছিল রামের ঝুলিতে। তারই নিট রেজাল্ট ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির এ রাজ্য থেকে ১৮টি আসন প্রাপ্তির ঘটনা। সেই প্রাপ্তির জেরেই কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি শ্লোগান তুলেছিল ‘আবকে বার ২০০ পার’। যদিও বাস্তবে সেই হিসাব মেলেনি। বাংলার মানুষ বিজেপির দৌড় ১০০’র অনেক আগেই থামিয়ে দিয়েছে।
একুশের নির্বাচনে বিজেপির মুখ থুবড়ে পড়ার পর থেকেই বাংলার বুকে বিজেপির ভোট ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। বিধানসভা নির্বাচনের পরে হয়ে যাওয়া এ রাজ্যের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফলেই তা প্রামাণিত। সেই নির্বাচনেই কার্যত ফুটে উঠেছে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক শুধু কমছেই তাই নয়, বামেদের ভোট ব্যাঙ্ক আবারও বাড়তে শুরু করেছে। মানে যে বাম ভোট রামের ঝুলিতে গিয়েছিল তা আবারও ফিরতে শুরু করে দিয়েছে বামের ঘরে। এই অবস্থায় বামেরা চাইছে যত দ্রুত সম্ভব রাজ্য রাজনীতিতে ফের ঘুরে দাঁড়াতে। আর সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন একের পর এক নির্বাচনে তাঁরা বিজেপিকে পিছনে ফেলে নিজেরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারবেন। সেই কারনেই তাঁরা চাইছেন আসানসোলে দ্রুত নির্বাচন করিয়ে নেওয়া হোক। যদিও এই বিষয়ে তৃণমূল কোনও তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না। বরঞ্চ বংশগোপালবাবুর প্রশ্নের সূত্র ধরে আসানসোল পুরনিগমের প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আসানসোল লোকসভার সাংসদ তহবিলের অর্থ আসানসোল পুরনিগম অথবা এডিডিএকে দেওয়া হোক। আর যদি ভোট করাতে পারে তো আরও ভাল। তবে বিজেপি চাইবে না দ্রুত নির্বাচন হোক। কেননা ওরা জানে ভোট হলেই ওরা হারবে।’