নিজস্ব প্রতিনিধি: জমি আন্দোলনের নেত্রী জানেন জমির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কত নিবিড়। তাই বীরভূম জেলার ডেউচা-পাঁচামিতে যাতে সিঙ্গুরের পুনঃরাবৃত্তি না ঘটে তারই আশ্বাস মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, ‘সিঙ্গুরে যেভাবে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল, সেভাবে আমরা তা করব না। ডেউচা-পাঁচামিতে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ দেওয়া হবে।’ সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, ‘ডেউচা-পাঁচামির হাত ধরে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল বদল ঘটতে চলেছে। ওখানে শিল্পস্থাপন হলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। আশেপাশের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যাবে। তবে আমরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে তবেই ওখানে শিল্প গড়ব। সিঙ্গুরের মতো জমি অধিগ্রহণ করে নয়।’
বীরভূম জেলার সিউড়ি সদর মহকুমার মহম্মদবাজার ব্লকের ডেউচা-পাঁচামি এলাকায় বাম জমানাতেই কয়লার সন্ধান মিলেছিল। কিন্তু সেই কয়লা উত্তোলন নিয়ে বেশ কিছু সমস্যায় থাকায় তখন তা বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কয়লা উত্তোলনের জন্য খনি নির্মাণ করার ছাড়পত্রের বিষয়ে ইউপিএ সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সূত্রেই ডেউচা-পাঁচামি আবার তার প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পায়। জানা যায় সেখানে প্রায় ২ মিলিয়ন টন কয়লা জমে রয়েছে। তবে ওই এলাকায় কয়লাখনি নির্মাণ করে তা উত্তোলনের জন্য রাজ্য সরকার এগিয়ে আসতেই স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা বেঁকে বসেন। তাঁরা পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। বীরভূম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী ডেউচা-পাঁচামিতে কয়লাখনি গড়ে তুলতে গেলে সেখানকার ১২টি গ্রামের ৪ হাজার ৩১৪টি বাড়িতে বসবাস করা ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ তাঁদের জমি বাড়ি হারাবেন। এই বিষয়টি সামনে আসতেই মুখ্যমন্ত্রী পুনর্বাসনের প্রক্রিয়াতেই বেশি জোর দিতে বলেন।
এদিন রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘বীরভূমের ডেউচা-পাঁচামিতে থাকা কয়লা ব্লকের হাত ধরে রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রে জোয়ার আসতে চলেছে। ঘুরে দাঁড়াতে চলেছে অর্থনীতি। প্রায় ২ মিলিয়ন কয়লা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন দেওয়া সেই সঙ্গে খনির পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ৫ থেকে ৬ বছর সময় লাগতে পারে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর কোল ব্লক ডেউচা-পাঁচামিতে কয়লা উত্তোলন শুরু করতে রাজ্য সরকার ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ তৈরি করছে। যার মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে পুনর্বাসন প্যাকেজের জন্য। যাদের ওই এলাকায় বাড়ি সহ জমি রয়েছে, তাঁরা কোনও ভাবেই বঞ্চিত হবেন না। তাঁদের জন্য রাজ্য সরকার ত্রাণ ও পুর্নবাসনের প্যাকেজ প্রস্তুত করছে। সিঙ্গুরে যেভাবে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে ডেউচায় সেভাবে জমি নেওয়া হবে না। তাদের কর্মসংস্থান, বাসস্থান সবরকমের ব্যবস্থা করা হবে। শুধু টাকা নয়, জমি-বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিপূরণে চাকরিও দেওয়া হবে জমিহারাদের। ওই এলাকায় জমিসহ বাড়ি রয়েছে এমন ব্যক্তি বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৩ লাখ টাকা পাবেন। এছাড়াও জিনিসপত্র স্থানান্তর, রক্ষণাবেক্ষণ এবং খামারে থাকা পশুপাখিদের জন্যেও আরও সাড়ে ৫ লাখ টাকা পাবেন বাসিন্দারা। সরকারের তৈরি পুর্নবাসন প্রকল্প অনুযায়ী ৬০০ বর্গফুটের একটি বাড়িও পাবেন তাঁরা এবং পরিবারপিছু একজন সদস্যকে কনস্টেবল র্যাঙ্কে চাকরি দেবে রাজ্য সরকার।’