নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্র সরকার এখনও গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি দেয়নি। তা নিয়ে রাজ্যের ক্ষোভ কিছু কম নয়। তারপরেও সেই মেলায় আয়োজনে যাতে কোনওরকম খামতি না থাকে তা সুনিশ্চিত করতে এদিন বাড়তি জোর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামিকালই মুখ্যমন্ত্রী ৩ দিনের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সফরে যাচ্ছেন। মূলত এই সফর থাকছে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার জন্য। এর পাশাপাশি জেলার আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি প্রশাসনিক বৈঠকও করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সফরের ঠিক আগেই সোমবার নবান্নের সভাঘরে গঙ্গাসাগর নিয়ে বিশেষ বৈঠক সেরে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই বৈঠকেই তিনি জোর দিলেন মেলার পরিকাঠামো ও পরিষেবার ক্ষেত্রে।
এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন যে পূণ্যার্থীদের কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত যাতায়াতের সুবিধার্থে ২২৫০টি অতিরিক্ত সরকারি বাস চালানো হবে। সেই সঙ্গে পূর্ব রেল মেলার ৬ দিন ৭০টি ট্রেন চালাবে বলেও জানা গিয়েছে। ট্রেন বা বাসে যাতে করেই পূণ্যার্থীরা আসুন না কেন তাঁদের যাতে এক টিকিটেই সাগরমেলায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রশাসনকে চিন্তাভাবনা করার কথাও জানান। কলকাতা থেকে সড়ক পথে যারা গঙ্গাসাগর যাবেন তাঁদের সহায়তার জন্য প্রতিটি বাসস্টপে ‘মে আই হেল্প ইউ’ ক্যাম্প খোলার জন্য পুলিশকে এদিন নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গঙ্গাসাগর মেলার সঙ্গে রাজ্যের ও পূণ্যার্থীদের ভাবাবেগ জড়িত বলে কোভিডকালেও মেলা বন্ধ রাখার পথে হাঁটা দিতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। পরিবর্তে কোভিড নিয়ে মেলায় পরিষেবা প্রদানের দিকেই জোর দিয়েছেন তিনি।
এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দেন, গঙ্গাসাগর মেলার জন্য ময়দান প্রাঙ্গনে পূণ্যার্থীদের আরটিপিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার আর সেটা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। তাই সব পূণ্যার্থীকেই এই টেস্ট বাধ্যতামূলক ভাবে করতে হবে। এই টেস্ট করা না থাকলে গঙ্গাসাগর যাওয়ার ছাড়পত্র যে মিলবে না তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই জোর দেওয়া হয়েছে সবাই যাতে কোভিড বিধি মেনে চলেন সেই বিষয়টতেও। মেলা প্রাঙ্গণে এবার কোভিড ঠেকাতে আলাদা করে কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। নবান্নেও আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। মেলায় কেউ কোভিডে আক্রান্ত হিসাবে চিহ্নিত হলে তাঁর চিকিৎসা থেকে শুরু করে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। কোভিডে আক্রান্ত পূণ্যার্থীদের চিকিৎসার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে খোলা হচ্ছে ৬০০ বেডের কোভিড হাসপাতাল যেখানে থাকবে আইসোলেশন ওয়ার্ডও। সেই সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্র ও অ্যাম্বুলেন্সও। মেলায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত যাতে ওই সব অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের কলকাতার পিজি হাসপাতাল বা বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে আসা যায় তার জন্য গ্রিন করিডরের ব্যবস্থাও তৈরি রাখতে এদিন পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্ঘটনা এড়াতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মেলায় আগত পূণ্যার্থীদের যাতে ভাষা সংক্রান্ত কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য বাংলা ও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি হিন্দি ভাষায় হোর্ডিংও বেশি করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গঙ্গাসাগর মেলায় প্রতিবছর বয়স্ক মানুষদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সেই সমস্যা ঠেকাতে এবারে প্রযুক্তিগত কৌশল নিচ্ছে রাজ্য সরকার যা রীতিমত গোটা দেশের মধ্যে অভিনব। ঠিক করা হয়েছে, মেলায় আগত প্রত্যেক বয়স্ক পূণ্যার্থীদের হাতে সরকারের তরফে কিউআর বেসড হাতঘড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে যাতে তাঁরা হারিয়ে গেলে ওই হাতঘড়ি দেখে সহজেই তা ট্র্যাক করা যায় যে তিনি ঠিক কোথায় আছেন। গোটা মেলা প্রাঙ্গণে নজরদারির জন্য লাগানো হচ্ছে হাজারের বেশি সিসিটিভি। মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাড়ে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবীও।