নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের জেলায় জেলায় ক্ষুদ্রশিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) নানা শিল্প এলাকায় ক্লাস্টার নির্মাণের ওপর অনেক আগে থেকেই জোর দিয়েছেন। এবার সেই পথে হাঁটা দিয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্প দফতর জানিয়ে দিল তাঁরা নদিয়া(Nadia) জেলার কৃষ্ণনগর শহরের বুকে ঘূর্ণি(Ghurni) এলাকাতে ক্লাস্টার নির্মাণ করতে চলেছে। আর সেই ঘোষণাটা হল এমন একটা সময়ে যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদিয়া জেলা সফরে গিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এই বিষয়টিতে এখন খুশির হাওয়া বইছে ঘূর্ণির পটুয়া-কুমোর পাড়ার শিল্পীদের মধ্যে। আগামিদিনে এই ক্লাস্টার চালু হলে সেখানে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই যে কাজ পাবেন সেটা ভেবেই তাঁরা বেশি খুশি। একই সঙ্গে ঘূর্ণির পুতুল আরও বেশি সংখ্যায় বিদেশে রফতানি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গেল। একই সঙ্গে এদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রানাঘাটে প্রশাসনিক বৈঠকের সভা থেকে হুগলি(Hooghly) জেলার গুড়াপে(Gurap) একটি পাওয়ারলুম প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন বিজেপির হাত ধরলে পাশে থাকবে না কংগ্রেস, বার্তা বামেদের
নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের উদ্যোগে সিপাহী বিদ্রোহের দুই দশক আগেই ঢাকা এবং নাটোরের মৃৎশিল্পীরা কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণিতে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের মৃৎশিল্প ধীরে ধীরে বাংলার শিল্পসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। সারা বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে আসেন ঘূর্ণির মাটির পুতুল দেখতে ও কিনতে। এহেন সমৃদ্ধ এক শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। সেই কারণেই এই শিল্পকে ঘিরে একটি ক্লাস্টার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, ক্ষুদ্র শিল্প দফতর এই ক্লাস্টার গড়ার দ্বায়িত্ব দিয়েছে খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদকে। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় একটি সমীক্ষার কাজ শুরুও করেছে পর্ষদ। বর্তমানে প্রায় ৩৫০ মৃৎশিল্পী ও তাঁদের পরিবার জড়িত রয়েছে ঘূর্ণির পুতুলশিল্পের সঙ্গে। ক্লাস্টার তৈরি করে এঁদের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। ক্লাস্টার তৈরির পর শিল্পীদের চাহিদা অনুসারে উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয়তা বা চাহিদাগুলি জানতেই সমীক্ষা করা হচ্ছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন ১২৭টি শহরের পুরস্বাস্থ্য বিভাগ আসছে স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে
প্রতিটি ক্লাস্টারে সাধারণত একটি কমন ফেসিলিটি সেন্টার থাকে। সেখানে নানা ধরনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করে দেয় রাজ্য সরকার। ক্লাস্টারের আওতায় সব শিল্পীই সেই যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া ক্লাস্টার থাকলে তৈরি পণ্য বাজারজাত করার সুবিধা হয়। সেক্ষেত্রেও সাহায্য করে রাজ্য সরকার। এই ক্লাস্টার নির্মাণ নিয়ে ঘূর্ণির রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত মৃৎশিল্পী সুবীর পাল জানিয়েছেন, ‘দ্রুত এই এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন প্রয়োজন। এখানকার বেচাকেনা নির্ভর করে মূলত পর্যটকদের ওপর। মায়াপুরে আসা পর্যটকরা যাতে জলঙ্গী নদী পেরিয়ে সহজেই ঘূর্ণি আসতে পারেন, তার জন্য ফেরি পরিষেবা চালুর অনুরোধ করা হয়েছে প্রশাসনকে। কৃষ্ণনগর পুরসভার অধীন এই এলাকায় একটি এটিএম এবং পর্যটকদের জন্য শৌচালয় সহ অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে তোলও প্রয়োজন।
আরও পড়ুন বাল্যবিবাহ রুখতে কন্যাশ্রীদের কাউন্সিলিং করাবে প্রশাসন
অন্যদিকে, এদিন রানাঘাটে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ৯৬টি অত্যাধুনিক এয়ারজেট পাওয়ারলুমের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুগলির গুড়াপে এই পাওয়ারলুমগুলি বসানো হয়েছে। এখানে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ১ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা খরচে গড়ে তোলা এই প্রকল্পে পোশাকের জন্য প্রায় দেড় কোটি কাপড়জাত পণ্য উৎপাদিত হবে। রাজ্যের প্রায় ১.১৭ কোটি স্কুল পড়ুয়াকে ইউনিফর্ম দেয় সরকার। তার জন্য পর্যাপ্ত কাপড় এ রাজ্যেই উৎপাদন করতে পাওয়ারলুম বসানোর উদ্যোগ বলে জানা গিয়েছে। পাওয়ারলুমের মেশিনের দামের ২০ শতাংশ টাকাও প্রদান করছে রাজ্য। আরও প্রায় ২০০টি পাওয়ারলুম বসানো হবে বলে জানা গিয়েছে।