নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের(Sukanta Majumdar) নিজ জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর(Dakshin Dinajpur)। সেই জেলারই একটি ব্লক হল কুমারগঞ্জ(Kumarganj) যা বালুরঘাট সদর মহকুমার মধ্যে পড়ে। এলাকাটি সুকান্তবাবুর সংসদীয় কেন্দ্রের মধ্যেও পড়ে। বঙ্গ বিজেপির নিত্যদিনের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গকে(North Bengal) নাকি পদে পদে বঞ্চিত করা হয়। অথচ সেই উত্তরবঙ্গের বুকেই মাত্র ১টি ব্লকের মানুষদের বাড়ি বাড়ি ফ্লোরাইড মুক্ত পরিস্রুত পানীয় জল(House to House Fluoride Free Drinking Water Project) সরবরাহে উদ্যোগী হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। আর তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। দ্রুত যাতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায় তার জন্য পুজোর আগেই টেন্ডার ডাকা হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। এরপরেও অবশি বঙ্গ বিজেপির সভাপতি থেকে দলের অনান্য সাংসদ ও বিধায়কেরা দাবি করবেন, মমতার সরকার উত্তরবঙ্গের জন্য কিছুই করে না। যদিও ধূপগুড়ি তাঁদের ভিন্ন বার্তাই দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন, গঙ্গারামপুর ও কুমারগঞ্জ ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলে মাত্রা অতিরিক্ত ফ্লোরাইড পাওয়া গিয়েছে। যা খেয়ে বা ব্যবহার করে ফ্লুরোসিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বাসিন্দারা। এই অবস্থার বদল ঘটাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আগেই তপন ও গঙ্গারামপুরে ফ্লোরাইড মুক্ত জল সরবরাহ করতে উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ইতিমধ্যেই সেখানে ২টি প্রকল্প গড়ে তুলেছে। এবার কুমারগঞ্জ ব্লকেও সেই একই ধরনের প্রকল্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দাবি, জেলার যে সমস্ত ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লোরাইড পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে তপন, গঙ্গারামপুর ও কুমারগঞ্জ অন্যতম। তপন ও গঙ্গারামপুরে দুটি প্রকল্প ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে। এবার কুমারগঞ্জেও সেই প্রকল্প গড়ে উঠতে চলেছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেই ওই ব্লকের প্রতিটি গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি নলবাহিত ফ্লোরাইড মুক্ত পরিস্রুত পানীয় জল সরবারাহ করা যাবে। মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জলস্বপ্ন(Jal Swapna) প্রকল্পের মাধ্যমে এই কাজ করা হবে।
রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডি, গঙ্গারামপুর, কুমারগঞ্জ, তপন এবং বংশীহারী ব্লকের সাধারণ মানুষের পানীয় জলে প্রতি লিটারে দেড় মিলিগ্রামের বেশি ফ্লোরাইড মিলেছে। সাধারণত পানীয় জলে প্রতি লিটারে ১.৫ মিলিগ্রাম করে থাকার কথা। সেখানে কুমারগঞ্জ, তপন, গঙ্গারামপুরে প্রতি ১ লিটারে ২-৩ মিলিগ্রাম ফ্লোরাইড মিলছে। অন্যদিকে কুশমণ্ডি ও বংশীহারি ব্লকেও জলে বেশি মাত্রায় ফ্লোরাইড পাওয়া গিয়েছে। ফলে অতিমাত্রা ফ্লোরাইড যুক্ত পানীয় জল খেয়ে ফ্লুরোসিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে তপন ও গঙ্গারামপুরে বাসিন্দাদের ফ্লোরাইড মুক্ত জল সরবারাহের কাজ শুরু করা হয়েছে। এবার কুমারগঞ্জের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর জন্য আত্রেয়ী নদীর ৮-৯ মিটার গভীর থেকে জল তোলা হবে। সেই জল তুলে তা পরিশোধনাগারে পাঠানো হবে। কুমারগঞ্জ ব্লকের ধাধলপাড়া ও সাহাজাতপুরে সেই জল পরিশোধনের জন্য দুটি পৃথক পৃথক পরিশোধনাগার তৈরি করা হবে। ব্লকের ১৭টি স্থানে তৈরি করা হবে জল ধরে রাখার রিজার্ভার। সেই রিজার্ভার থেকে গ্রামের বাড়ি বাড়ি নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়া হবে। অত্যাধুনিক যংন্ত্রাংশের সাহায্য ভূগর্ভস্থ থেকে তোলা জল ফ্লোরাইড মুক্ত করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে দ্রুত যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এরপরেও হয়তো সুকান্ত মজুমদারই বলবেন, মমতার সরকার উত্তরবঙ্গের জন্য কিছুই করছে না।