নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি কথা দিলে সেই কথা রাখেন। সমতলের মানুষ আগেই সেই প্রমাণ পেয়েছেন। একবার নয়, একাধিকবার। এবার সেই প্রমাণ পেতে চলেছেন পাহাড়ের মানুষও। দার্জিলিং(Darjeeling) পাহাড়ের অসংখ্য চা বাগানের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারীদের শ্রমিকদের(Tea Garden Labours) কাছে এতদিন তাঁদের বাসজমির পাট্টা ছিল না। কেননা দার্জিলিং এবং কালিম্পং পাহাড়ে অধিকাংশ জমি হয় চা বাগান মালিকের নাহয় রাজ্য বন দফতরের বা ডিআই ফান্ড কিংবা সরকারি ডেভেলপমেন্ট ল্যান্ড হিসাবে চিহ্নিত। তবে পাহাড়ের এইসব চা শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের এই চা শ্রমিকেরা দাবি তুলে আসছিলেন তাঁদের বাড়ির জমির পাট্টা(House Land Patta) যেন তাঁদের দেওয়া হয়। কিন্তু কিবা কংগ্রেস জমানা কিবা বাম জমানায় তাঁদের সেই দাবি কানেই তোলা হয়নি। পরিবর্তনের পরে কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) পাহাড়ে গিয়ে চা শ্রমিকদের কথা দিয়েছিলেন তিনি জমির পাট্টা তাঁদের হাতে তুলে দেবেন। সেই কথা তিনি রেখেছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই সেই পাট্টা প্রদানের কাজ শুরু হতে চলেছে পাহাড়ের বুকে।
আরও পড়ুন মমতার নির্দেশে চিকিৎসক-কর্মী নিয়োগে ৪ স্তরের Safety Mechanism
জানা গিয়েছে, গত বুধবার রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন GTA চিফ এগজিকিউটিভ অনীত থাপা। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে জমির পাট্টার বিষয়টিও ছিল। অনীত পাহাড়ের ডিআই ফান্ডের জমি এবং সিঙ্কোনা চা বাগানের জমির অধিকারের প্রসঙ্গও সরকারকে জানিয়েছেন। নবান্ন সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে ফোন করে অনীতকে জানানো হয় খুব দ্রুত বাগান ধরে ধরে সমীক্ষা শেষ করেই দশ দিনের মধ্যে পাট্টা বিতরণের ব্যবস্থা চালু করা হবে। আর সেই ফোনের পরে এদিন অর্থাৎ শুক্রবার থেকেই পাহাড়ের চা শ্রমিকদের এলাকায় গিয়ে গিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া শুরু হয়েছে যে রাজ্য সরকার চা শ্রমিকদের ‘প্রজাপাট্টা’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব শীঘ্রই সেই পাট্টা দেওয়ার কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। কার্যত স্বাধীনতার পর থেকেই পাহাড়ের চা শ্রমিকেরা তাঁদের বসবাসের জমির পাট্টা চেয়ে আসছেন। হাতে গোনা ক্ষেত্রে পাট্টা বা জমির অধিকারের কাগজ পেয়েছেন তাঁরা। পাহাড়ের ৮৭টি বড় চা বাগান ও সিঙ্কোনা বাগানের শ্রমিকেরা বেশি করে সেই দাবি তুলেছেন বার বার। প্রতি ভোটের আগে জমির পাট্টার আশ্বাস রাজনৈতিক দলগুলি পাহাড়ে দিয়ে থাকে। কিন্তু ভোট মিটলেই যে কে সেই। দাবি মেনে পাট্টা প্রদানের সিদ্ধান্ত আর কার্যকর হয়নি। মমতাই প্রথম সেটা করে দেখাচ্ছেন।
আরও পড়ুন কেন্দ্রকে কড়া বার্তা রাজ্যের, বৈঠকে ‘না’ নবান্নের
স্বাভাবিক ভাবেই পাহাড়ে এখন খুশির বন্যা বয়ে চলেছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অনীত থাপাও। তবে মমতার এই সিদ্ধান্তকে পাহাড়ের রাজনীতিতে কার্যত Masterstroke হিসাবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কেননা তাঁদের অভিমতে মমতা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এক ঢিলে অনেকগুলি পাখিই মেরে দিলেন। প্রথমত এই সিদ্ধান্তের জেরে, চা শ্রমিকদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি আস্থা বাড়ল। এর ফলে আগামী দিনে রাজ্য সরকার কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য সেদিকে তাঁরা তাকিয়ে থাকবেন। দুই, তৃণমূলের জনপ্রিয়তা বাড়বে পাহাড়ে। জোড়াফুলের ওপর পাহাড়ের মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়বে যা পাহাড়ের পুরনির্বাচন বা পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে। তৃতীয়ত, বিচ্ছিন্নবাদীরা পাহাড়কে আবারও অচল করার কৌশল নিক বা স্তব্ধ করার চেষ্টা চালাক সেই ডাকে পাহাড়ের জনতা আর চট করে সাড়া দেবে না। চতুর্থত, যারা বার বার পাহাড়কে পৃথক রাজ্য করার ডাক দেন তাঁদের কাছে বার্তা চলে গেল, পাহাড়ের জমির ওপর অধিকার শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। পাহাড় বাংলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ভারতের কাছে কাশ্মীর যা, বাংলার কাছে দার্জিলিংও তা।