নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি। বাংলার নির্মাণ শ্রমিকদের দক্ষতাও প্রশ্নাতীত। ভিন রাজ্যে রুটি-রুজির সন্ধানে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে সিংহভাগ এঁরাই। রাজ্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নথিভুক্ত হওয়া নামের নিরিখে বর্তমানে ৪৩ লক্ষের গণ্ডি ছাড়িয়েছে নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা। এবার এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের আঠারোর্ধ্ব ছেলেমেয়েদের বাজারের চাহিদামতো দক্ষ শ্রমিক করে তুলতে উদ্যোগী হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। নির্মাণ শ্রমিক ও তাঁদের ছেলেমেয়েদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কর্মরত শ্রমিকদেরও। সব মিলিয়ে এর জন্য ৫০০ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছে রাজ্যের শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড।
আরও পড়ুন Housing for All প্রকল্পে কাউকে আর ১টাকাও দিতে হবে না
বাংলার রাজমিস্ত্রীরা কার্যতব এখন দেশ নির্মাণের কারিগর হয়ে উঠেছেন। দেশের একের পর এক বড় নির্মাণ কাজে যেমন তাঁদের ডাক পড়ে তেমনি দেশের একাধিক রাজ্যের আবাসন ও নির্মাণ শিল্পেও তাঁদের ডাক পড়ে। যার জন্য বাংলার এই রাজমিস্ত্রীদের বছরের বেশির ভাগ সময়েই কাটে বাড়ির বাইরে বাইরে। গ্রামে পড়ে থাকে তাঁদের পরিবার ও সন্তানরা। কোভিডের সময়ে এই নির্মাণ শ্রমিকেরাই সব থেকে বেশি অসুবিধার সন্মুখীন হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সেই রাজমিস্ত্রীরাই আবারও দেশের নির্মাণ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন স্বভাবসিদ্ধ গতিতে। এবার রাজ্য সরকার এগিয়ে আসছে এই নির্মাণশিল্পীদের পরিবারের সদস্যদের জীবনের পথে আর একটু এগিয়ে দিতে। আরও ভাল ও দক্ষ কাজ করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কর্মরত শ্রমিকদেরও। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের নির্মাণ শ্রমিকদের হাতে-কলমে অন্তত ৬টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর জন্য ইতিমধ্যে পেশাদার সংস্থার কাছ থেকে আগ্রহপত্র আহ্বান করেছে রাজ্যের শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড। প্রথম দফায় দেড় লক্ষ শ্রমিককে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আবার শ্রমিকদের আঠারোর্ধ্ব সন্তানদের ১৮টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রায় ৩ লক্ষ ছেলেমেয়েকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাদের পছন্দ অনুযায়ী। প্রশিক্ষণের দিনগুলিতে খাওয়ার খরচ ছাড়াও স্টাইপেন্ডের ব্যবস্থা থাকছে।
আরও পড়ুন ২৮ হাজার কোটি টাকার সড়ক নির্মান শুরু বাংলায়, জুড়বে মোদির বারাণসী
এর পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই নির্মাণশ্রমিকদের কল্যাণে আরও একটি মাস্টারস্ট্রোক দিতে চলেছে। তৈরি হতে চলেছে জেলাওয়াড়ি Transit Guest House বা হস্টেল। শ্রমিকদের দূরবর্তী স্থানে যাতায়াতের ফাঁকে দু’দণ্ড বিশ্রামের জন্য এই গেস্ট হাউস বা হস্টেল তৈরির পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। এর জন্য জেলাসদরে দু’বিঘা করে জমি খোঁজার জন্য জেলা শাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পূর্তদফতরকে হস্টেল বা ট্রানজিট গেস্ট হাউস তৈরির বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট বা DPR তৈরি করতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, পঞ্চয়েত ভোটের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প চালু করে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। কেননা, গ্রামবাংলায় নির্মাণ শ্রমিক ও তাদের পরিবার মিলিয়ে এক কোটিরও বেশি ভোটার রয়েছে। কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদিয়া, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলাজুড়ে এদের পরিবারের বসবাস। স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে উঠলে তা ভোট বাক্সে শাসক দলকেই ভাল ডিভিডেন্ড এনে দেবে।