নিজস্ব প্রতিনিধি: তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল জঙ্গলের জনতা। অপেক্ষা করছিল তাঁর বার্তার। দুটোই এল খাতড়া আর ঝাড়গ্রাম(Jhargram) থেকে। জঙ্গলমহল(Jungalmahal) সফরে বেড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। প্রথমে পুরুলিয়া, তারপর বাঁকুড়া, শেষে এদিন ঝাড়গ্রামে সভা করে কলকাতায় ফিরছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই সফর লোকসভা নির্বাচনের মুখে। তাই সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন, ভোটের আগে আদিবাসীদের কী বার্তা দেন তিনি, তা দেখতে। মমতা অবশ্য সেই বার্তা দিতে শুরু করে দিয়েছিলেন গতকাল থেকেই। এদিন তা আরও কেয়েক কদম বাড়িয়ে দিলেন। আদিবাসী অনুভূতি ছুঁতে তাঁদের ভাষায় খাতড়া ও ঝাড়গ্রাম দুই জায়গা থেকেই কিছু কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দুই সভাতেই তিনি পা মিলিয়েছেন ধামসা মাদলের তালে। গতকাল খাতড়ায় সভায় তাঁর সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি। আর এদিন পা মেলালেন বীরবাহা হাঁসদা। আর মমতা দিলেন আদিবাসী সমাজকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
এদিন ঝাড়গ্রামের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আদিবাসী ভাই-বোনেদের আমি খুব ভালবাসি। আমি অলচিকি ভালবাসি। কবিতাও লিখেছি। ভাল বলতে পারি না। আপনাদের কাছে ভুল বলতে বলতে ভাষাটা শেখা হয়ে যাবে। আজ আড়াই লক্ষ মানুষের কাছে কোনও না কোনও পরিষেবা পৌঁছে গেল। আমরা সমাজের গুণী মানুষের হতে বিভিন্ন সম্মান তুলে দিলাম। আর্থিক ভাবে দুর্বল আদিবাসীদের সাহায্য করা হয়েছে। জঙ্গলমহল উৎসব-সহ সব উৎসবে আর্থিক সাহায্য় করা হয়েছে, পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামে ফুটবল অ্যাকাডেমি হবে। পুরুলিয়াতে আমাদের ছৌ অ্যাকাডেমি আছে। আপনারা জানেন, আমরা আদিবাসী ডিপার্টমেন্ট উন্নয়ন দফতর নতুন করে তৈরি করেছি। কলকাতায় নতুন দফতর হয়েছে। আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর করা যাবে না, তার জন্য আইনও হয়েছে। ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্টের অধীরে ৪৮ হাজার ৬৭৩ জন ফরেস্ট পাট্টা দেওয়া হয়েছে। বিডিওদের অনুরোধ করব, এলাকায় এলাকায় যান, উন্নয়নমূলক কাজ করুন। পরে কমিটি করে দেব। ঝাড়গ্রামে বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওন্যাল অফিস হবে।’
তবে এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন Cast Certificate নিয়ে। তিনি জানান, ‘আমরা এখনও পর্যন্ত ২০ লক্ষ ৮১ হাজার কাস্ট সার্টিফিকেট দিয়েছি। আদিবাসী ভাই-বোনদের যেন জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে কোনও অভিযোগ না থাকে, তা-ও দেখতে বলেছি। যদি কেউ আদিবাসীদের নাম নিয়ে ভুয়ো সার্টিফিকেট করেন, যদি দেখা যায় সেটা জাল, তাহলে মানব না। কয়েকজন BLRO দুষ্টুমি করে গিয়েছেন, সেগুলো আমাদের দেখতে হবে। যদি ভুল পথে সার্টিফিকেট কেউ নিয়ে থাকে তাহলে তা বাতিল হবে। আদিবাসীদের সব উত্সব পালন করে আমাদের সরকার। বিরসা মুন্ডা ও রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। বিজেপি শাসিত রাজ্যে আদিবাসীদের ওপরে অত্যাচার হলেও এ রাজ্যে আদিবাসীদের জমি দখল ঠেকাতে আইন করা হয়েছে। কুড়মিদের একাংশ আদিবাসী। , আদিবাসী এবং কুড়মি সমাজের অনেকে, যাঁরা আদিবাসী আছেন, তাঁরা প্রকৃতির পূজারি। ওঁদের সারি ও সারনা ধর্মকে অবিলম্বে স্বীকৃতি না দিলে আন্দোলন গড়ে তুলব। আদিবাসীদের ধর্মের একটা কোড আছে। সব ধর্মের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। কেন্দ্র সব নিয়ম ভেঙে বলছে, ইউনিফর্ম সিভিল কোড করতে হবে! আমরা এটা মানবো না। প্রয়োজনে আন্দোলনের পথে হাঁটবো।’