নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি কেন্দ্রের মন্ত্রী। একই সঙ্গে ২৪’র ভোটে বিজেপির(BJP) প্রার্থীও। সেই তাঁর বিরুদ্ধেই কিনা অভিযোগ উঠল গায়ের জোরে ঘর দখল করার। শুধু তাই নয়, যেভাবে মতুয়া সমাজের ভাবাবেগকে তিনি ধাক্কা দিয়েছেন তা চূড়ান্ত নিন্দানীয় হয়ে উঠেছে রাজ্যজুড়ে। এমনকি প্রকাশ্যে তাঁর এহেন কুকর্মকে সমর্থন জানাতে পারছেন না পদ্মধিবিরের নেতারাও। বরঞ্চ তাঁদের আশঙ্কা, মতুয়া সমাজ এই ঘটনা মেনে নেবে না। ভোটে এর ফল ভুগতে হবে। নজরে শান্তনু ঠাকুর(Shantanu Thakur)। তাঁর বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ উঠেছে তাই নয়, রীতিমত ঘটনার ভিডিও এখন ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। যেভাবে কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়েও আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে তিনি তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের(Mamatabala Thakur) ঘর দখল করেছেন তা কার্যত বলে দিচ্ছে, বুলডোজারের নীতি নিয়ে চলা বিজেপির নয়া বুকডোজার হয়ে উঠেছেন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। যিনি আইন নয়, গায়ের জোরে সব কিছু দখল করতে চান। যার কাছে মতুয়া ভাবাবেগ কোনও গুরুত্ব পায় না। দাবি মতুয়া সমাজের একাংশের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে দুটি ভিডিওর ১টিতে দেখা যাচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার গাইঘাটা ব্লকের ঠাকুরনগরে মতুয়া ধর্মসমাজের প্রাণ কেন্দ্র ঠাকুরবাড়ির চৌহদ্দিতে থাকা তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের বাড়ির দরজা ভাঙতে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছেন খোদ কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। রবি সন্ধ্যায় সেই ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, সেই তালা ভেঙে ঘর দখল করে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় মমতাবালা ঠাকুর ও তাঁর মেয়েকে। দুইজনকেই কার্যত সারারাত রাস্তায় কাটাতে হয়েছে। একই সঙ্গে অপর একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ঠাকুরবাড়িতে মন্দিরে জুতো পরেই প্রবেশ করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সঙ্গে অবশ্যই শান্তনু ঠাকুর। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে হলুদ জামা পরে শান্তনু ঠাকুর একটি চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর সামনেই সম্ভবত প্রণামীর থালা। আর সেখানে একজন জুতো পরে দাঁড়িয়ে আছেন চৌকাঠের পাশেই।
সেই ভিডিও প্রকাশ করে তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) তরফ বলা হয়, ‘বিজেপির সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সামনেই কেন্দ্রীয় বাহিনী জুতা পরে মন্দির চত্বরে প্রবেশ করে। ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িকে অপবিত্র করা হয়। সেই সময় দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন শান্তনু। এটাই অবশ্য তাঁর প্রথম অপরাধ নয় – এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ঠাকুরবাড়িতে দর্শন করতে গিয়েছিলেন এবং জোর করে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তখনও এই একই ঘটনা দেখা গিয়েছিল। মতুয়া সম্প্রদায়ের ভাবাবেগের প্রতি কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই শান্তনুর। এমন একজন মানুষকে জমিদার বলে অভিহিত করা ছাড়া আর উপায় নেই! শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম বার্ষিকীর একদিন পরে শান্তনু ঠাকুর এভাবে সম্মান জ্ঞাপন করলেন তাঁকে। আবারও বিজেপি এবং মোদির পরিবারের বাংলা বিরোধী নোভাব সামনে এসেছে। বাংলার প্রতি তাঁদের কোনও সম্মান নেই।’
ঘটনা প্রসঙ্গে মমতাবালা জানিয়েছেন, ‘বড়মার ঘরে… যেখানে আমি থাকি, সেই ঘরে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ঢোকে শান্তনু। সেখানে জুতো পায়ে ঢোকে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বড়মা বেঁচে থাকা অবস্থায় কেন ওরা ঘরে দখল নিতে আসেনি। কেনই বা শান্তনু ঠাকুরদের জন্ম এই বাড়িতে হয়নি? কারণ আমার শ্বশুরমশাই প্রমথরঞ্জন ঠাকুর ওদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছিল।’ জানা গিয়েছে, যেভাবে শান্তনু ঘরে দখল নিয়েছেন তার জেরে শান্তনু ঠাকুর-সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গাইঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মমতাবালা ঠাকুর। এদিকে শান্তনু জানিয়েছেন, ‘আমার ঠাকুমা-ঠাকুরদাদার ঘর। অনেকবার ঢুকতে চেয়েছি। ওরা দখল করে রেখেছিল। এবার হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে হোক বা যেভাবেই হোক আমি ঢুকেছি। আমার ঠাকুরদার ঘর। এখানে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম থাকবে? আমি কেন এসেছি, কাউকে কোনও কৈফিয়ত দেব না। এই বাড়িতে আমাদের অধিকার আছে সেই অধিকার আমরা বুঝে নিয়েছি।’ তবে ঘটনা হচ্ছে শান্তনুর এই গা জোয়ারি মনোভাবকে মেনে নিতে রাজি নয় মতুয়া সমাজ। কেননা মমতাবালা ঠাকুর বীণাপাণি দেবী বা মতুয়া সমাজের(Matua Society) বড়মার পুত্রবধূ। তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মমতাবালার সঙ্গেই ছিলেন, তাঁর কাছেই ছিলেন। সেই মমতাবালা আর তাঁর মেয়েকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে ঘরে দখল নেওয়া মেনে নিতা পারছেন না কেউই।