নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মী লাভের আশায় সরস্বতীর হাত ছাড়লো মাধবী। ময়নাগুড়ি রোড এলাকার বাসিন্দা কার্তিক পালের মেয়ে মাধবী পাল। তিনি দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে বাড়িতে অভাব। তাই একপ্রকার ভাবে বাবাকে সাহায্য করতে পড়াশোনা ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে তিনি লেগে পড়েছেন প্রতিমা বানাতে। পুজো আসে পুজো যায়। কিন্তু ঘরে না তাদের ভাগ্যের চাকা। তবুও লক্ষ্মী লাভের আশায় ফি বছর লক্ষ্মী প্রতিমা বানায় ময়নাগুড়ির পাল পাড়ার বাসিন্দারা।
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের ময়নাগুড়ি রোড এলাকায় এখন সাজো সাজো রব। কারণ আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার এই দুইদিন ধরে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। প্রতিমা তৈরীর জন্য হাতে আর মাত্র একদিন সময়। তাই এখন প্রচণ্ড ব্যস্ততা এই এলাকায়। ময়নাগুড়ি রোড এলাকায় রয়েছে ২৫-৩০ টি পাল পরিবার। যাদের মূল উপার্যনের পথ হল লক্ষ্মী, মনসা, বিশ্বকর্মা ও সরস্বতী প্রতিমা বানিয়ে তা বিক্রি করা। আর এই চার ধরনের প্রতিমা বানিয়ে সারা বছরের সংসার চালানোর খরচ জোগার করে থাকে এই পাল পরিবার গুলি। এই পরিবার গুলি মূলত পাইকারি দড়ে শহরের দশকর্মা ভান্ডারে প্রতিমা বিক্রি করে থাকে। একেকটা প্রতিমা ২০/- থেকে শুরু করে ৫০০/- পর্যন্ত দড়ে বিক্রি করে থাকে। একেকটি পরিবার ছোট বড় মিলিয়ে ৬০০ থেকে ১২০০ পিস লক্ষ্মী পর্যন্ত প্রতিমা বানিয়ে থাকেন। গত দু’বছর ধরে করোনা সংক্রমণের ঠেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা বিক্রি প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। এবছরেও বিভিন্ন সাইজের বিশ্বকর্মা ঠাকুর বানিয়েছিল এই পরিবার গুলি। কিন্তু তেমন ভাবে বিক্রি না হওয়ায় সমস্যায় পড়ে এই ক্ষুদ্র প্রতিমা শিল্পীরা।
এবার করোনার প্রকোপ খানিকটা কম থাকায় আশা এবার হয়ত ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো মহা ধূমধামের সঙ্গে হবে। তাই বাড়ির বৌ, বাচ্চা, নাতি-নাতনি সকলকে নিয়ে প্রতিমা বানাতে নেমে পড়েছে পাল পরিবার গুলি। এদের মধ্যে কার্তিক পালের পরিবারের মেয়ে মাধবী পাল। তিনি দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে বাড়িতে অভাব। তাই একপ্রকার ভাবে বাবাকে সাহায্য করতে পড়াশোনা ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে তিনি লেগে পড়েছেন প্রতিমা বানাতে। ঘটনায় আল্পনা পাল জানালেন আগে তিনি এই কাজ করেননি। তার বিয়ের পর থেকে গত ছয় বছর ধরে সংসারে লক্ষ্মী লাভের আশায় প্রতিমা বানাচ্ছেন। কার্তিক পাল জানালেন ছোট বেলা থেকে তিনি তার বাবার সঙ্গে এই কাজ করে আসছেন। গত দু’বছর ধরে করোনার কারণে বাজার অত্যন্ত খারাপ। প্রতিমা বানানোর খরচ উঠছে না। তাই এবারে কারিগর না রেখে বাড়ির সকলে মিলে প্রতিমা তৈরী করছেন তারা।
মাধবী পাল জানালো, সে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। গত ১৪ বছর ধরে বাবার হাতে হাতে প্রতিমা বানাতে সাহায্য করত। কিন্তু বর্তমানে বাড়িতে অভাব। বাবা কার্তিক পালের পক্ষে একা প্রতিমা বানানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি কারিগর রেখে প্রতিমা বানানোর খরচ অনেক। তাই বাবাকে সাহায্য করতে পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখন বাবার সঙ্গে প্রতিমা বানাচ্ছেন তিনি।