নিজস্ব প্রতিনিধি, পশ্চিম মেদিনীপুর: শীতের আমেজ গায়ে মেখে,শীতলতম দিনে ঠান্ডার রাতে শহরবাসী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, ঠিক সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে,শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার ভোর রাত পর্যন্ত চলল প্রোমোটার(Promoter) ও দুষ্কৃতীদের বেনজির তাণ্ডব। মেদিনীপুর শহরের গোলকুয়ারচক এলাকা, যা কিনা কোতোয়ালি থানার থেকে মাত্র দেড়শ মিটার দূরে নাকের ডগায়, সেইখানে ভোর রাত জুড়ে চলে এই তান্ডব। সারা রাজ্য জুড়েছে বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতী তান্ডবের যে ছবি মানুষ এখন দেখতেপাচ্ছেন বারবার । ঠিক যেন তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠল শান্তির এই মেদিনীপুর শহরে(Medinipur City)।শহরের প্রসিদ্ধ তিন ব্যবসায়ী বহু বছর ধরে এইখানে ব্যবসা করে আসছেন। জনতা ড্রাই ক্লিনারস,এভেল টেলার ও একটি মোবাইল সরঞ্জাম এর দোকান এবং সুধাশু টেলার।
হঠাৎই রাত্রি দেড়টা নাগাদ তারা জানতে পারেন কে বা কারা এসে তাদের দোকান বুলডোজার ও JCB দিয়ে ভাঙচুর চালাচ্ছে। এর আগে তারা কোন রকম ভাঙার জন্য তথ্য বা নোটিশও পাননি হাতে। ভাঙা হচ্ছে জানতে পারার পর তারা গিয়ে যখন বাধা দেন,তখন তাদের বন্দুক নিয়ে ও অস্ত্র সহ ভয় দেখানো হয়। আর এই গন্ডগোলের মাঝেই প্রায় পুরো দোকানই তাদের ভেঙে ফেলে দুষ্কৃতীরা। এই বিষয়ে বলতে গিয়ে এভেলে টেলারের মালিক কাঞ্চনবাবু জানান, আমরা প্রায় ৫০-৬০ বছর ধরে এখানে দোকান করে ব্যবসা করছি। এমন কি আমাদের কাছে কোর্টের রায়ের কপি আছে যাতে আমরা এখানে ব্যবসা করতে পারি। কিন্তু এখনো সরকারি কাগজপত্র আমরা হাতে পাইনি।আর এরই মধ্যে এসে আমাদের দোকানের পেছনের জায়গার মালিক বরুন সেনের সহযোগিতায় প্রোমোটাররা আমাদের দোকান ভেঙ্গে জায়গা দখল নেওয়ার চেষ্টা চালালো। দোকান ভাঙার আগে কোনরূপ নোটিশ(Notice) বা জানানোর প্রয়োজন বোধ পর্যন্ত করেননি। উল্টে রাতের অন্ধকারে এসে দোকান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হল।
প্রতিবাদ করায় বন্দুক নিয়ে হামলা চালানো হলো।আমরা বহু টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হলাম। সব হারিয়ে সর্বশ্রান্ত হয়ে পড়লাম।স্বাভাবিকভাবে এই ঘটনায় সারা শহর জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শান্তির শহর মেদিনীপুরে এই ধরনের ঘটনা মানুষ দেখতে অভ্যস্ত নন। তাই সকাল থেকেই সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ জানান। সকাল থেকেই ব্যস্ততম ওই এলাকার রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই তড়িঘড়ি পৌরসভা সকাল থেকে ভাঙা দোকান পরিষ্কার করার কাজে JCB লাগায় রাস্তার দু দিক বন্ধ রেখে। এই ঘটনার জন্য মুলত জায়গার মালিক ও তিন প্রোমোটারের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে।পুলিশ প্রশাসন দোষীদের ধরার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছে বলে তাদের তরফে জানানো হয়েছে। একজনকে আটক করে থানাতে আনা হয়েছে বলেও জানা গেছে, অন্য তিনজন আপাতত পলাতক,তাদের খোঁজ চলছে । অন্যদিকে পৌরপ্রধান সৌমেন খান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের দোকান পৌরসভার পক্ষ থেকে আমরা বানিয়ে দেবো, আগামীকাল থেকেই সেই কাজ শুরু হবে।
শহরের বিরোধী দল সিপিআইএম এর পক্ষ থেকে এ বিষয় নিয়ে থানায় ডেপুটেশন দেওয়া হয়। CPIM মেদিনীপুর শহর পূর্ব এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুন্দন গোপ বলেন, রাতের অন্ধকারে যে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের সহ এই ঘটনা যাদের মদতে ঘটলো তাদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এর ব্যবস্থা করতে হবে। আর পুলিশ প্রশাসনকে শহরের শান্তি শৃংখলার সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও শহরের প্রোমোটার সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।