নিজস্ব প্রতিনিধি: এ বড় এক অদ্ভূত দশা। দলের নেতা খুন হয়েছেন এই আওয়াজ তুলে শাসকের বিরুদ্ধে হই হই করে মাঠে নেমে পড়েছিল প্রধান বিরোধী দল। অথচ পুলিশ যখন জানিয়ে দিল নেতা খুন হননি, বরঞ্চ বেআইনি অস্ত্রের লেনদেনে জড়িত ছিল তখন মুখ লোকাতে আর জায়গা পাননি গেরুয়া শিবিরের নেতারা। শেষে নিজেদের মুখরক্ষার্থে তাঁরা জেলাজুড়ে বনধ ডাকলেন। তাও মাত্র ৮ ঘন্টার জন্য। সেই বনধ পালনেও এদিন সকাল থেকেই জেলা জুড়ে কোথাও একজন বনধ সমর্থনকারীর দেখা মিললো না। এটাই বঙ্গ বিজেপির বর্তমান দশা। দলের নেতারা হুঙ্কার দিচ্ছেন, তাতে আস্থা দেখাচ্ছেন না দলেরই কর্মীরা। দলের নেতারা বনধ ডাকছেন, তাতে সমর্থন দিচ্ছেন না দলেরই কর্মীরা। এদের উপনির্বাচনে কে ভোট দেবে, সেই প্রশ্নই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।
রবিবার রাতে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহারের রাজবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জেলার বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি মিঠুন ঘোষ। সেই ঘটনার জেরে প্রথম থেকেই মৃত নেতার পরিবারের তরফে অভিযোগ তোলা হয় যে রাজ্যের শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছেন মিঠুন। বিজেপির নেতারাও সেই অভিযোগকেই সামনে নিয়ে এসে শোরগোল জুড়ে দেন। ঘটনাচক্রে মারা যাওয়ার আগে মিঠুন তাঁর ভাইকে দুটি নাম বলে গিয়েছিলেন। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে সেই দুইজনের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করে জেরা করতেই বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসে। জানা যায়, এই ঘটনার পিছনে কোনও রাজনীতিই নেই। মিঠুন নিজে বেআইনি অস্ত্রের লেনদেন ফেঁদে বসেছিলেন। সেই সূত্রেই বন্দুক দেখাতে গিয়ে গুলি ছিটকে নিজেই আহত হন ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। সেই তথ্য সামনে আসতেই গলার সুর নামাতে থাকেন বিজেপির নেতারা। তবুও দল আর নিজেদের মুখ রক্ষায় তাঁরা জেলাজুড়ে ৮ ঘন্টার বনধের ডাক দেন।
বিজেপির ডাকা এই বনধে একদিকে যেমন একটা বড় অংশের মানুষ ক্ষুব্ধ হন তেমনি সোশ্যাল মিডিয়াতে হাসির হুল্লোড়ও ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধতার কারণ এদিন সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়ে যাবে লক্ষ্মীর আরাধনা। অনেকেই এদিন সকালে বাজার করবেন বলে স্থির করেছিলেন। তাঁরা বিজেপির এই পদক্ষেপে রীতিমত বিপাকে পড়েছেন ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আবার মাত্র ৮ ঘন্টার বনধ ডাকতেও এর আগে কাউকে দেখা যায়নি। অনেকেই মনে করছেন মানুষ বনধ সমর্থন করবেন না বলেই বিজেপি নেতারা এত কম সময়ের বনধ ডেকেছেন। আর তাতেই হাসির হুল্লোড় পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে বিজেপির এই বনধ যে দলেরই মুখ বেশি পুড়িয়েছে সেটা এদিন সকাল থেকেই বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। কার্যত উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে ৮ ঘন্টার বনধ ডাকা হলেও এদিন সকাল থেকে জেলার কোথাও কোনও বনধ সমর্থনকারী বা পালনকারীর দেখা মেলেনি। এদিন সকাল ৬টা থেকেই বনধ শুরু হয়েছে জেলায়। কিন্তু ইটাহার ছাড়া সেভাবে কোথাও কোনও প্রভাবই পড়েনি। শুধুমাত্র ইটাহারের কিছু এলাকায় বন্ধ রয়েছে সমস্ত দোকান-পাট। রাস্তায় যানবাহনের দেখাও সেখানে তেমন একটা মিলছে না। যদিও গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে জেলায়। কখনও মুষলধারে কখনও বা মাঝারি। সেই কারণেও রাস্তায় জনমানুষের তেমন একটা দেখা মেলেনি। রায়গঞ্জ শহরে কার্যত সব দোকানবাজারই খুলছে। যাত্রী পরিবহন এর গাড়িও চলছে৷ ইসলামপুর শহরেও বেশীরভাগ দোকানবাজার খোলা। সব রকমের পরিবহন চলছে।