নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গের(North Bengal) জলপাইগুড়ি শহরের(Jalpaiguri Town) পিডব্লুডি মোড় থেকে শুরু করে শহরের পোস্ট অফিস, থানা মোড় হয়ে কদমতলা মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা কার্যত জনসুনামি। অস্বীকারের উপায় নেই। কিন্তু সেই ভিড়ের মধ্যেও থাকছে প্রশ্ন। জনসুনামির ঢেউ শেষ পর্যন্ত ভোট বাক্স অবধি পৌঁছাবে কিনা তা নিয়েই থাকছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করেছে এলাকাবাসী থেকে কংগ্রেসের নেতাকর্মী সমর্থক মায় প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরেও। ভিড় মানেই যে ভোট নয়, সেটা কে না জানে। তারপর যাকে দেখতে ভিড় তাঁর নাম রাহুল গান্ধি(Rahul Gandhi)। তিনি ইন্দিরা গান্ধির নাতি, রাজীব গান্ধি ও সোনিয়া গান্ধির ছেলে। তাঁকে দেখতে তো ভিড় হবেই হবে। কেননা গান্ধি পরিবারের প্রতি এখনও দুর্বলতা রয়েছে দেশের ও বাংলার আমজনতার। কিন্তু সেই দুর্বলতা মানেই ভোটের সমর্থন নয়। আর সেখানেই উঠছে প্রশ্ন। রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায়(Bharat Jodo Nyay Yatra) জলপাইগুড়িতে জনসুনামি নামলেও তার আদৌ কী কোনও প্রতিফলন ঘটবে বাংলার বুকে কংগ্রেসের(INC) ভোটবাক্সে। সেটাই প্রশ্ন হয়ে ঘুরছে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে।
প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের একাংশের দাবি, মূলত যারা অধীরপন্থী, রাহুলের পদযাত্রা বাংলায় কংগ্রেসের মরা গাঙে বাণ এনেছে। এই বাণে বিজেপি আর তৃণমূল ভেসে চলে যাবে। এই কথা তাঁরা আগেও বলেছেন, আগামী দিনেও বলবেন। কিন্তু সেই বুলির বাস্তবায়ন বাংলার বুকে অন্তত কোথাও দেখা যায়নি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসকে(TMC) হারাতে রাহুলের দল কংগ্রেস হাত ধরেছিল বামেদের। যদিও বাংলার মানুষের সমর্থন পায়নি সেই জোট। বরঞ্চ কংগ্রেসের ভোট অনেক বেশি মাত্রায় চলে গিয়েছে তৃণমূলের দিকে। একক শক্তিতে সেবার তৃণমূল ২০০’র বেশি আসন পেয়েছিল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু সেই জোটকেও মান্যতা দেননি বাংলার মানুষ। রাজ্যের বিধানসভা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বাম ও কংগ্রেস দুই শিবিরের বিধায়কেরাই। আজ রাহুল এসে পদযাত্রা করে বা সভা করে যে ম্যাজিক দেখাতে পারবেন না ভোটের বাক্সে সেটাও বিলক্ষণ জানেন কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতারা। তবুও আছে আশা। যদি আসন মেলে বাংলা থেকে। যদি মেলে দিল্লিতে যাওয়ার ছাড়পত্র।
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, রাহুলের পদযাত্রায় জনসুনামি মানেই বাংলার মানুষের বা উত্তরবঙ্গের মানুষের কংগ্রেসের প্রতি স্নেহ ঢলে পড়া তা কিন্তু মোটেও নয়। ভুললে চলবে না তৃণমূল তৈরিই হয়েছে কংগ্রেস ভেঙে। এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা যতই দিনরাত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলকে গালমন্দ করুক না কেন, তৃণমূলের যাবতীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা কিন্তু এখন মনেপ্রাণেই কংগ্রেসি। মমতা আর তৃণমূলই তাঁদের কাছে সেই কংগ্রেস। গান্ধি পরিবারের প্রতিও তাঁরা নরম। কিন্তু তাঁরা তিতিবিরক্ত প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের নিয়ে। তাঁদের অন্ধ মমতা বিরোধিতা, অন্ধ বামপ্রীতি, অন্ধ বিজেপিবান্ধব নীতি বাংলার মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তাই একুশের নির্বাচনে তাঁরা রাজ্য বিধানসভা থেকে বাম আর কংগ্রেস এই দুই দলকেই বিদায় জানিয়ে মমতার হাতকেই শক্ত করেছেন। ২৪’র ভোটেও করবেন। কেননা তাঁদের ক্ষোভটা অধীররঞ্জন চৌধুরীর বিরুদ্ধে, গান্ধি পরিবারের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশ্বত রাহুল সেই অধীরের হাতই ধরেছেন। এর মাশুলও তাঁকেই গুণতে হবে। এই জনসুনামির পরেও যদি কংগ্রেস বাংলা থেকে একটিও আসন জিততে না পারে তাহলে লোকে আরও হাসবে।