নিজস্ব প্রতিনিধি: পাহাড়ের(Darjeeling Hill) সমস্যার সমাধানের নামে কার্যত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দিয়ে সেখানকার পরিবেশ একসময় অগ্নিগর্ভ করে তুলেছিল বিজেপি(BJP) ও তাঁদের পরিচালানাধীন কেন্দ্রের সরকার। বিজেপির মদতেই বিমল গুরুং(Bimal Gurung) ও তাঁর দলবল পাহাড়ে অশান্তির আগুন লাগাবার পাশাপাশি দিনের পর ধরে বনধ চালিয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) অসীম ধৈর্য্য ও শান্ত মনোভাবের জন্য সেই সময় পাহাড় নিয়ে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেয়নি রাজ্য সরকার। পরে যখন বিমল গুরুংয়ের দিক থেকে পাহাড়বাসী মুখ ঘুরিয়ে নিতে শুরু করে তখন গুরুংকে ঝেড়ে ফেলে দিতে বিজেপি ২ মিনিটের বেশি ৩ মিনিট সময় নেয়নি। কার্যত গোর্খাদের(Gorkha) আবেগ গোর্খাল্যান্ড(Gorkhaland) গঠনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি যে কার্যত ছেলেখেলা করছে সেটা তৃণমূল বার বার বলেছে। বলেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। এবার সেই কথাতেই শিলমোহর দিয়ে দিল খোদ কেন্দ্রের একটি সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গোর্খা রেজিমেন্টে(Gorkha Regiment) নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গোর্খা জনজাতি মূলত নেপালি হলেও ভারতের একাধিক রাজ্যে এই জনজাতির কয়েক লক্ষ মানুষের বসবাস। অতি বীর এই জনজাতি বরাবরই সাহসী যোদ্ধা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে এসেছে ইতিহাসের পাতায়। সেই কারণেই ব্রিটিশ সরকার দেশের সেনাবাহিনীতে গোর্খা রেজিমেন্ট গড়ে তুলেছিল। কিন্তু এবার সেই রেজিমেন্টেই নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার যা এই রেজিমেন্টকে অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
উপমহাদেশের গোর্খাদের মধ্যে প্রধান যে দুই আবেগ কাজ করে তা হল গোর্খাল্যান্ড ও গোর্খা রেজিমেন্ট। বাংলা ভেঙে পৃথক রাজ্য গঠন করা যে সম্ভব নয়, সেটা বুঝে বিজেপি এখন গোর্খাল্যান্ড গঠনের কথা মুখেও আনে না। আর এবার তাঁরা গোর্খা রেজিমেন্টটাকেই কার্যত বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এখানেই পরিষ্কার গোর্খাল্যান্ড গঠনের নামে বিজেপি ও মোদি সরকার কার্যত পাহাড়ের ও গোর্খাদের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার পাশাপাশি তাঁদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করে এসেছে।
গোর্খা রেজিমেন্টের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে একটা সময় এই রেজিমেন্ট থেকে উঠে এসেছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া ভারতের প্রথম ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ। এই রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন প্রয়াত প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তাঁদের গৌরবময় উপস্থিতির মধ্যেও আজ অস্তিত্বের সঙ্কটের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে গেল গোর্খা রেজিমেন্ট। নেপালি গোর্খা সেনারা বহু দশক ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার কাজ করে আসছেন। অথচ মোদির জমানায়, অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করার প্রথা চালুর পর থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গোর্খা নিয়োগ নিয়ে ধীরে চলো নীতি শুরু করে কেন্দ্র সরকার। বর্তমানে নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফলে, বর্তমানে রেজিমেন্টে গোর্খাদের সংখ্যা খুবই কম। ১৯৪৭ সালে স্বাক্ষরিত একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পর নেপালি গোর্খারা ব্রিটেন, ভারত ও নেপালের সেনাবাহিনীর অংশ হয়ে উঠেছিলেন। এই চুক্তির পর ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত গোর্খা সেনাদের পদমর্যাদায় পরিবর্তন আসে। স্বাধীনতার পর ভারতের পাশাপাশি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে গোর্খারা চাকরি করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের চুক্তির পর সেই সময় ১১টি গোর্খা রেজিমেন্টের মধ্যে ৭টি ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ হয়ে ওঠে। বাকি ৪টি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।