নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রের ক্ষমতায় বসে থেকে যা খুশি করা যায়। যাকে খুশি গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেওয়া যায়। যার তার বিরুদ্ধে ED, CBI, NIA-কে লাগিয়ে দেওয়া যায়। যখন খুশি যেমন খুশি আইন লাগু করে দেওয়া যায়। যে কোনও রাজ্যের পেটে লাথি মেরে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া যায়। সীমান্তে BSF-কে দিয়ে যাকে খুশি গুলি করে মেরে দেওয়া যায়। আরও অনেক কিছুই খুশি মতো করা যায় কেন্দ্রের চেয়ারে বসে থাকলে। খালি যেটা পারা যায় না তা হলে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে। এদিন অর্থাৎ রবিবার সেটাই সামনে চলে এল। প্রকৃতির রোষ বাংলার বুকে, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ে যেতেই পারলেন না দেশের দ্বিতীয় সর্বশক্তিমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)। শিলিগুড়ি থেকেই তাঁকে দিতে হল বার্তা, সেটাও মোবাইলে। তারপরেই পাহাড়ে বাতিল হয়ে গেল সভা।
আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ২৬ এপ্রিল দেশে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিন রয়েছে। সেদিন দেশের ৮৭টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। তার মধ্যে বাংলার ৩টি লোকসভা কেন্দ্রও আছে। এই ৩ কেন্দ্র হল – দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট। এদের মধ্যে দার্জিলিং আসনটিই(Darjeeling Constituency) এ রাজ্যে সব থেকে বেশি দিন বিজেপির দখলে আছে। সেই দার্জিলিং কেন্দ্রেই এদিন সভা করার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। কিন্তু এদিন অর্থাৎ রবিবার শুরুতেই প্রকৃতি বেঁকে বসে সেই প্রচারের জন্য। খারাপ আবহাওয়ার কারণে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে শাহকে নিয়ে চপার উড়তেই পারেনি পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। অথচ পাহাড়ের বুকে এই সভায় যোগ দেওয়ার জন্য গতকাল রাতেই শিলিগুড়িতে চলে আসেন শাহ। এদিন বেলা ১১টা থেকে দার্জিলিংয়ের লেবংয়ের গোর্খা মাঠে জনসভা করার কথা ছিল তাঁর। সকাল ১০টা থেকেই সেখানে ভিড় জমতে শুরু করে। কিন্তু শাহকে নিয়ে খারাপ আবহাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার বাগডোগরা থেকে উড়তেই পারেনি পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। শেষে যেতে না পেরে দুপুর ১টা নাগাদ সেই সভা বাতিল করে দেয় বিজেপি নেতৃত্ব।
তবে তার আগে ফোন মাধ্যম সংক্ষিপ্ত বার্তা দেন সভায় আসা লোকেদের জন্য। তিনি জানান, ‘দার্জিলিং পৌঁছতে না পারার জন্য আমি দুঃখিত। পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে পারে শুধু বিজেপি। আপনারা রাজু বিস্তাকে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত করুন, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদিকে আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করুন। গোর্খাদের মতো বলিদান এই দেশের জন্য আর কেউ দেয়নি। আমি আমাদের গোর্খা পরিবারকে বলতে চাই, আপনাদের ন্যায়ের লড়াইয়ে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আমরা ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করবই। সংবিধান আপনাদের ন্যায়বিচার দেবে।’ সব দেখে তৃণমূলের(TMC) কটাক্ষ, মানুষ যে আর বিজেপিকে চাইছে না সেটা গত শুক্রবারই বোঝা গিয়েছে। তৃণমূল ওই ৩ কেন্দ্রেই জিততে চলেছে। আর এদিন বোঝা গেল প্রকৃতিও চাইছে না বিজেপি(BJP) জিতুক। তাই শাহের দার্জিলিং যাত্রায় বাধা দিয়ে দিল খোদ প্রকৃতি। হিমালয়ও আর চাইছে না পদ্ম ফুটক পাহাড়ে।
এখন প্রশ্ন হল শাহের এই সভা না হওয়ার জন্য কার ক্ষতি হল? ২০০৯ সাল থেকে দার্জিলিংয় লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে বিজেপির দখলে। এখনও পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ১ বারের জন্য হলেও জয়ের মুখ দেখতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পাহাড়ের ক্ষমতা এখন কার্যত অনীত থাপার হাতে চলে গিয়েছে। তিনি সমর্থন জানাচ্ছেন তৃণমূলকে। তাই এবার জোড়াফুল পাহাড় জয়ে বেশ আশাবাদী। পাহাড়ের লোকসভা কেন্দ্র হিসাবে দার্জিলিংকে চিহ্নিত করা হলেও তার মধ্যে সমতলের ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রও রয়েছে। ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ এই ৩ বছরের লোকসভা নির্বাচনে পাহাড় ও সমতলের অর্ধেকের বেশি ভোটই গিয়েছে বিজেপির পক্ষে। তাই টানা ১৫ বছর তাঁরা এই কেন্দ্র ধরে রাখতে পেরেছে। একই সঙ্গে এর আগে বিজেপি পাহাড়ে এক প্রার্থীকে ২ বার মনোনয়ন দেয়নি, যা এই বছর দেওয়া হয়েছে। আর এই বছরই বিজেপিকে সব থেকে বেশি বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। এক তো পাহাড়ে পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছে না পদ্মশিবির। তারওপর দলেরই বিধায়ক এই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। এবার সেখানে বাধ সাধল প্রকৃতিও।